ষষ্ঠ অধ্যায় : রাষ্ট্র, নাগরিকতা ও আইন
সৃজনশীল
প্রশ্ন-১: 'ক' রাষ্ট্রের জনগণ
কর্তৃক নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি মোবারক হোসেন শ্রমনীতি প্রণয়ন, বয়স্কভাতা ও পেনশন
বৃদ্ধির জন্য আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। 'ক' রাষ্ট্রের সরকার ২টি নতুন হাসপাতাল, বিনামূল্যে
ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য বই বিতরণ এবং বাল্যবিবাহরোধে আইন প্রণয়ন করেন।
ক. "স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের জন্য কতিপয় পরিবার
ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র”- উক্তিটি কার?
খ. 'নাগরিকত্ব' ধারণাটি কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব মোবারক হোসেন কর্তৃক শ্রমনীতি প্রণয়ন
রাষ্ট্রের কোন ধরনের কাজ, তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অনুচ্ছেদের আলোকে 'ক' রাষ্ট্রকে কি কল্যাণমূলক
রাষ্ট্র বলা যায়? উত্তরের সপক্ষে তোমার যুক্তি দাও।
১ নং প্রশ্নের উত্তর:
ক. "স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের জন্য কতিপয় পরিবার
ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র"- উক্তিটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটলের।
খ. নাগরিকত্ব বলতে বোঝায় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক
অধিকার ও নাগরিক সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে
বাধ্য হওয়া। বৃহৎ অর্থে নাগরিক হচ্ছেন তিনি, যিনি তার রাষ্ট্রে স্থায়িভাবে বসবাস করেন
এবং ঐ রাষ্ট্রের আইন, সংবিধান ও অন্যান্য নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
গ. জনাব মোবারক হোসেন কর্তৃক শ্রমনীতি প্রণয়ন
রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক বা ঐচ্ছিক কাজ।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং কর আদায়ের মধ্যেই শুধু
রাষ্ট্রের ভূমিকা সীমাবদ্ধ নয় বরং রাষ্ট্রকে অবশ্যই সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য,
নাগরিকদের নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে কল্যাণমূলক
ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়; যা কল্যাণমূলক বা ঐচ্ছিক কাজ বলে পরিগণিত।
রাষ্ট্রের বিশাল কর্মীবাহিনীকে পরিচালনা করা
ও নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শ্রমনীতি প্রণয়ন এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি রাষ্ট্রের
ঐচ্ছিক কাজের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম সঠিক মজুরি ও কাজের সময় নির্ধারণ,
কাজের পরিবেশ সৃষ্টি, বোনাস, ইন্স্যুরেন্স, পেনশন সুবিধা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি,
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য
শ্রম অফিসার নিয়োগ প্রভৃতি শ্রমনীতির অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐচ্ছিক
কাজ।
ঘ. হ্যাঁ, অনুচ্ছেদের আলোকে 'ক' রাষ্ট্রকে কল্যাণমূলক
রাষ্ট্র বলা যায়।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সমাজের সামগ্রিক উন্নতির
জন্য নাগরিকদের নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে কাজ
করে। উদ্দীপকের অনুচ্ছেদে দেখা যায়, 'ক' নামক রাষ্ট্রটি শ্রমনীতি প্রণয়ন, বয়স্ক ভাতা,
পেনশন বৃদ্ধির জন্য আইন, হাসপাতাল নির্মাণ, বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং বাল্যবিবাহ রোধে
আইন প্রণয়ন করে থাকে; যা কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিলক্ষিত। রাষ্ট্রের জনসাধারণকে শিক্ষিত
করে তোলা 'কল্যাণ রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ লক্ষ্যে সরকার বাধ্যতামূলক
প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন, নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বসহ বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করে,
নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদেরকে
বই প্রদান করে। অপরদিকে, জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং সমস্ত বিদ্যমান বিভিন্ন
বৈষম্য ও কুপ্রথা দূরীকরণে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র
তার নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং অসুস্থদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান (বিনামূল্যে
ও স্বল্প খরচে), হাসপাতাল, দাতব্য
চিকিৎসালয়, শিশুসদন, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, পরিবার
পরিকল্পনা কেন্দ্র, দেশব্যাপী অস্থায়ী হেল্থ ক্যাম্পেইন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে।
তাছাড়া জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, রোগ
প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক টীকা প্রদান প্রভৃতি সেবা রাষ্ট্র প্রদান করে। এছাড়া যৌতুক ও
বর্ণপ্রথা দূরীকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে বলা যায়, 'ক'
রাষ্ট্রটি একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ২: দৃশ্যকল্প-১: কুসুমপুর
গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার এবং আয়তন ১০৪২ বর্গকিলোমিটার। গ্রামবাসী গ্রামের প্রধানকে
মান্য করে।
দৃশ্যকল্প-২: 'X' রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তার
জন্য একটি বাহিনী রয়েছে। তারা সরকারকে সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
পাশাপাশি সরকার জনগণের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল চালুর ব্যবস্থা করছে।
ক. আইন কাকে বলে?
খ. কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়? ব্যাখ্যা
কর।
গ. দৃশ্যকল্প-১-এ রাষ্ট্রের কোন উপাদানের অনুপস্থিতি
রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২-এর রাষ্ট্রটি কি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র?
মতামত দাও।
২ নং প্রশ্নের উত্তর:
ক. সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং মানুষের
সামাজিক কল্যাণের জন্য গৃহীত সুনির্দিষ্ট নিয়মের সমষ্টিকেই আইন বলে।
খ. আইনের প্রাধান্য ও আইনের দৃষ্টিতে সকলের সাম্য
প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়। আইনের প্রাধান্য বজায় থাকলে সরকার
স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করতে সচরাচর সাহস করে না। আইনের প্রাধান্য
নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। সকলের জন্য একই আইন প্রযোজ্য হবে। আর এভাবেই আইনের শাসন
প্রতিষ্ঠা করা যায়।
গ. দৃশ্যকল্প-১-এ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নামক
উপাদানের অনুপস্থিতি রয়েছে।
রাষ্ট্রের ধারণা ব্যাখ্যা করলে আমরা রাষ্ট্রের
চারটি উপাদান দেখতে পাই। যথা- জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। প্রত্যেক
রাষ্ট্রই এ চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হলেও দৃশ্যকল্প-১-এর কুসুমপুর গ্রামে তিনটি
উপাদান উপস্থিত। গ্রামটিতে যদি এ তিন উপাদানের সাথে সার্বভৌমত্ব থাকত তাহলে গ্রামটিকে
রাষ্ট্র বলা যেত। রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান সার্বভৌমত্ব, বা সার্বভৌমিকতা।
সার্বভৌম শব্দ দ্বারা চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতাকে
বোঝায়। সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গঠন পূর্ণতা পায়। এ ক্ষমতা রাষ্ট্রকে
অন্যান্য সংস্থা থেকে পৃথক করে। সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের ঐ বৈশিষ্ট্য যার ফলে নিজের
ইচ্ছা ছাড়া অন্য কোনো ধরনের ইচ্ছার দ্বারা রাষ্ট্র আইনসংগতভাবে আবদ্ধ নয়। প্রত্যেক
সমাজব্যবস্থায় চূড়ান্ত ক্ষমতা কার্যকর হওয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকবে।
আর এ ক্ষমতাই হলো সার্বভৌম ক্ষমতা। সার্বভৌমের আদর্শই হলো আইন।
অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১-এ সার্বভৌমত্ব
অনুপস্থিত।
ঘ. হ্যাঁ, দৃশ্যকল্প-২ এর রাষ্ট্রটি একটি কল্যাণমূলক
রাষ্ট্র।
রাষ্ট্রের ভূমিকা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং
কর আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র সমাজের সামগ্রিক উন্নতির
জন্য নাগরিকদের নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে কল্যাণমূলক
ভূমিকায় অবতীর্ণ থেকে মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করে।
দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লিখিত 'X' রাষ্ট্রের কার্যাবলিও
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কার্যাবলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা
রক্ষার নিশ্চয়তা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান কাজ। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের
সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে রাষ্ট্র শিক্ষা বিস্তারের প্রতি
অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এবং শিক্ষা সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। রাষ্ট্র তার
নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং বিদ্যমান বিভিন্ন বৈষম্য ও কুপ্রথা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ
সামাজিক ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। যথা: রাস্তাঘাট,
মেট্রোরেল, সেতু, রেলপথ; নৌ চলাচল, বিমান যোগাযোগ,
ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত
উন্নয়ন কল্যাণ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজের অন্তর্ভুক্ত। সুষ্ঠু পরিবহন ও যোগাযোগ
ব্যবস্থা গড়ে তোলা রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
উদ্দীপকের 'X' রাষ্ট্রটিতেও জনগণের নিরাপত্তার
জন্য একটি বাহিনী রয়েছে এবং সরকার জনগণের সুবিধার্থে মেট্রোরেলের চালুর ব্যবস্থা করছে।
সুতরাং বলা যায়, 'X' রাষ্ট্রটি অবশ্যই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৩: 'Y' গ্রামের জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে
জীবনযাপন করছে।
তারা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়মিত স্কুলে পাঠায়
এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা করে। অপরদিকে 'T' গ্রামের
জনগণ সম্পত্তির বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। খবর পেয়ে উপজেলা
প্রশাসন পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ক. তথ্য অধিকার আইন কী?
খ. জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না।
কেন?
গ. 'V' গ্রামের জনগণ যে কাজগুলো করে, তা রাষ্ট্রের
কোন ধরনের কাজ? ব্যাখ্যা ক
ঘ. 'T' গ্রামের জনগণের বিরোধ মীমাংসা করা রাষ্ট্রের
অপরিহার্য কাজ" বিশ্লেষণ কর।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর:
ক. জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে সুনিশ্চিত
করার লক্ষ্যে যে আইন প্রণীত হয় তাই তথ্য অধিকার আইন।
খ. জনসমষ্টি রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান
তাই জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না।
রাষ্ট্র গঠনের জন্য জনসমষ্টি একান্ত অপরিহার্য।
জনসমষ্টি বলতে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জনগণকে বোঝায়। জনসমষ্টির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা এবং
পারস্পরিক সম্পর্ক হতে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। তাই জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা
যায় না। জনসমষ্টি কম হোক অথবা বেশি হোক জনসমষ্টি থাকা আবশ্যক। তাই জনসমষ্টিকে রাষ্ট্রের
প্রাথমিক উপাদান বলে।
গ. উদ্দীপকে 'V' গ্রামের জনগণ যে কাজগুলো করে,
তা রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক বা ঐচ্ছিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য, নাগরিকদের নৈতিক,
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে কল্যাণমূলক কাজসমূহকে ঐচ্ছিক
বা গৌণ কাজ বলে। যে
রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে যতবেশি উন্নত তার ঐচ্ছিক
কার্যাবলি ততবেশি বিস্তৃত। গৌণ কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের জনসাধারণকে শিক্ষিত
করে গড়ে তোলা জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং বিদ্যমান বিভিন্ন বৈষম্য ও কুপ্রথা
দূরীকরণ, জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্য যেমন- চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, তেল
ইত্যাদি সরবরাহ প্রক্রিয়া সচল রাখা; শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়ন ও প্রসার; অবকাঠামোগত
উন্নয়ন; জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য তুলে ধরা; জনগণের
স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষা করা; রাষ্ট্রের বিশাল কর্মীবাহিনীকে পরিচালনা করা ইত্যাদি।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের 'V' গ্রামের জনগণের করা কাজগুলো গৌণ বা ঐচ্ছিক কাজ।
ঘ. উদ্দীপকে 'T' গ্রামের জনগণের বিরোধ মীমাংসা
করা রাষ্ট্রে মুখ্য কাজ-প্রশ্নোক্ত বাক্যটি যথার্থ।
রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব
এবং রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ
করে, সেগুলোকে রাষ্ট্রের অপরিহার্য বা মুখ্য কাজ বলা হয়। এ প্রসঙ্গে আর, এম, ম্যাকাইভার
তার 'Modern State' গ্রন্থে, বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কাজ
বা দায়িত্ব।
নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা
রক্ষার নিশ্চয়তা থেকে রাষ্ট্র নামক সংগঠনের সৃষ্টি হয়। জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করা,
সমাজের শান্তি ভঙ্গকারীদের শাস্তির বিধান করা এবং সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা
বজায় রাখা রাষ্ট্রের প্রধান কাজ। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্র স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ে
রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে থাকে। রাষ্ট্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ ও অন্যান্য
আধা-সামরিক বাহিনী গড়ে তোলে। উদ্দীপকে 'T' গ্রামে সম্পত্তির বিরোধে জড়িয়ে পড়া জনগণকে
সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখার কাজ হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত; যা রাষ্ট্রের
জনসাধারণের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে আবশ্যক।
পরিশেষে বলা যায়, জনগণের বিরোধ মীমাংসা রাষ্ট্রের
অপরিহার্য কাজ।
প্রশ্ন-৪: দৃশ্যকল্প-১: মিলির
এলাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে কাজ চলায় রাস্তায় প্রায়ই
তীব্র যানজট লেগে থাকে। ফলে মিলির এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে অনেক কষ্টে প্রতিদিন স্কুল-কলেজে
যেতে হয়।
দৃশ্যকল্প-২: বি.এস.বি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম-দশম
শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের বিষয় নির্ধারিত
হয়- 'আইনের অনুশাসনই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে'। বিষয়টির পক্ষে ও বিপক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থাপন
করা হয়। এমন একটি যৌক্তিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত করায় শিক্ষার্থীরা বিচারকমণ্ডলীর
ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে।
ক. অ্যারিস্টটল প্রদত্ত নাগরিকের সংজ্ঞাটি লেখ।
খ. দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো
নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ উল্লিখিত কাজটি রাষ্ট্রের কোন
ধরনের কার্যাবলিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এর, বিতর্কের আলোচ্য বিষয়টিটির
যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
৪ নং প্রশ্নের উত্তর:
ক. রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞায় বলেছেন, সে ব্যক্তিই নাগরিক যে নগররাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব ও শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।
খ. সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা
করার জন্য দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রত্যেক নাগরিককেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমনকি রাষ্ট্রের বেআইনি কোনো কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি নাগরিকেরা প্রতিবাদ না করে তবে কখনোই পঙ্কিলতামুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব নয়; এ কারণেই সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।
গ. দৃশ্যকল্প-১-এ উল্লিখিত কাজটি রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক
বা ঐচ্ছিক কার্যাবলিকে ইঙ্গিত করে।
রাষ্ট্রের ভূমিকা শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং
কর আদায়েই সীমাবদ্ধ নয়; বরং আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য নাগরিকদের
নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও
অর্থনৈতিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশে কল্যাণমূলক
ভূমিকায় অবতীর্ণ থেকে মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করে।
জনকল্যাণ ও উন্নয়নে রাষ্ট্রের এ ধরনের কাজগুলো
কল্যাণমূলক বা ঐচ্ছিক কাজ। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন; যথা- রাস্তাঘাট, সেতু, সড়ক, রেলপথ,
মেট্রোরেল, নৌচলাচল, বিমান যোগাযোগ, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ, এবং যোগাযোগের আধুনিক
প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত থাকা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ঐচ্ছিক কাজ। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ
মিলির এলাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ এর কাজও তদ্রূপ রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক বা কল্যাণমূলক কাজ।
বর্তমানে বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক বিপ্লব সাধিত হয়েছে যার প্রতিচ্ছবি মিলির
এলাকাতেও দৃশ্যমান। মেট্রোরেল নির্মাণের ফলে মিলির এলাকার পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, সুষ্ঠু পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা রাষ্ট্রের উন্নতির
জন্য অপরিহার্য। যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে যতবেশি উন্নত তার ঐচ্ছিক কার্যাবলি ততবেশি
বিস্তৃত। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্বের কল্যাণকামী রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও রাষ্ট্রের
ঐচ্ছিক বা কল্যাণমূলক কাজের পরিধি দিন দিন ব্যাপক ও বিস্তৃত হচ্ছে যার প্রতিফলন মিলির
এলাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিলক্ষিত হয়।
সুতরাং, দৃশ্যমান-১-এ উল্লিখিত কাজটি রাষ্ট্রের
ঐচ্ছিক বা কল্যাণমূলক কার্যাবলিকেই ইঙ্গিত করে।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২-এ বিতর্কের আলোচ্য বিষয়টি হলো-
'আইনের অনুশাসনই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে।' আমিও মনে করি বিষয়টি যৌক্তিক।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনের অনুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সকল নাগরিক সমানভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রদত্ত
সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে। কেউ কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। সাধারণভাবে আইন
বলতে সামাজিকভাবে স্বীকৃত লিখিত ও অলিখিত বিধিবিধান ও রীতিনীতিকে বোঝায়। উড্রো উইলসনের
মতে, "আইন হলো সমাজের সেইসকল প্রতিষ্ঠিত প্রথা ও রীতিনীতি যেগুলো সমাজ ও রাষ্ট্র
কর্তৃক স্বীকৃত এবং যা সরকারের অধিকার ও ক্ষমতার দ্বারা বলবৎ করা হয়।"
আইনের অনুশাসন সাধারণভাবে দু'টি ধারণা প্রকাশ
করে। যথা- ক. আইনের প্রাধান্য এবং খ. আইনের দৃষ্টিতে সকলের সাম্য। আইনের প্রাধান্য
নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। সমাজে আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে কেউ আইন অমান্য
করে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আইনের প্রাধান্য বজায় থাকলে সরকার স্বেচ্ছাচারী
হতে পারে না এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করতে সচরাচর সাহস করে না। বিনা অপরাধে কাউকে গ্রেফতার
করা, বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখা ও শাস্তি দেওয়া প্রভৃতি আইনের প্রাধান্যের পরিপন্থি।
সরকার কারও ব্যক্তিস্বাধীনতায় অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সাহস পাবে না যদি
আইনের প্রাধান্য বিরাজমান থাকে। আর 'আইনের দৃষ্টিতে সকলের সাম্য বলতে বুঝায় সমাজে ধনী-দরিদ্র,
সবল-দুর্বল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই সমান। আইনের চোখে কেউ বাড়তি
সুবিধা পাবে না। সকলের জন্য একই আইন প্রযোজ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক
পরিবেশ সৃষ্টি করা আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আবশ্যক।
আইনের শাসনের অভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক
সময় নাগরিকদের বিনা অপরাধে আটক রেখে হয়রানি করে। রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা তখনই খর্ব
হয় যখন আইনের অনুশাসন থাকে না। সুতরাং, 'আইনের অনুশাসনই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে'-বক্তব্যটি
পুরোপুরি যথার্থ ও যৌক্তিক।
প্রশ্ন ৫: দৃশ্যপট-১: জনাব আলী
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিনি দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন বিধিবিধান পরিবর্তন, সংশোধন ও প্রণয়ন
কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
দৃশ্যপট-২: সালমা বেগম তার জমিজমা সংক্রান্ত
কাগজপত্র আনতে গেলে সংশ্লিষ্ট অফিস তাকে নানাভাবে হয়রানি করে। অবশেষে তিনি উপযুক্ত
কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।
ক. রাষ্ট্রের সংজ্ঞা লেখ।
খ. সুশাসনের জন্য আইন প্রয়োজন কেন?
গ. জনাব আলীর কার্যক্রম রাষ্ট্রের কোন বিভাগের
কাজ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষই সালমা
বেগমের মতো নারীদের সহায়তা করে দেশের সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে" যুক্তিসহ মতামত
দাও।
৫ নং প্রশ্নের উত্তর:
ক. রাষ্ট্র হলো একটি ভূখণ্ডভিত্তিক সমাজ বিশেষ
যার সংগঠিত সরকার ও জনসমষ্টি রয়েছে এবং যার নিজস্ব ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে অন্যান্য সকল
প্রতিষ্ঠানের ওপর সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত আছে।
খ. আইনের শাসনের অভাবে জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা,
মৌলিক অধিকার, জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের
ক্ষেত্রে অবহেলা বা বিলম্ব হলে রাষ্ট্রে অপরাধ প্রবণতা ও দুর্নীতি বেড়ে যায়। নাগরিকের
দুর্ভোগ বৃদ্ধির সাথে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সুশাসন বাধাগ্রস্থ হয়। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায়
আইনের প্রয়োজন অত্যধিক।
আইন রাষ্ট্র, নাগরিকতা ও
গ. উদ্দীপকে জনাব আলীর কার্যক্রম রাষ্ট্রের আইনবিভাগের
কাজ।
সরকারের তিনটি বিভাগের একটি হলো আইন বিভাগ। আইন
বিভাগ আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োজনবোধে প্রচলিত আইনের সংশোধন বা রদবদল করে থাকে। আইন বিভাগের
একটি অংশ হলো আইনসভা বা পার্লামেন্ট। আইনসভা আইন প্রণয়ন করে। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের
নিয়ে কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে এটি গঠিত হয়। আইনসভা প্রণীত আইন
রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতি লাভের পর কার্যকর হয়। প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইনসভা রয়েছে। এসব
আইনসভা বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। উদ্দীপকের দৃশ্যপট-১
এ জনাব আলী একজন সংসদ সদস্য। অর্থাৎ তিনি আইন বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ বিভাগটির
ক্ষমতা ও কার্যাবলি অনেক। যেমন- আইন প্রণয়ন ক্ষমতা, সরকার গঠন বিষয়ক ক্ষমতা, আর্থসংক্রান্ত
ক্ষমতা, বিচার বিষয়ক ক্ষমতা, নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ। সংবিধান সংরক্ষণ ও সংশোধন প্রভৃতি।
অতএব বলা যায়, জনাব আলীর কার্যক্রম আইন বিভাগের
কাজকেই নির্দেশ করে।
ঘ. উদ্দীপকের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষই সালমা বেগমের
মতো নারীদের সহায়তা করে দেশের সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে বলে আমিও মনে করি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ৩৯ অনুচ্ছেদে
চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তথ্য প্রাপ্তির
অধিকার এরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ সরকার ৫ এপ্রিল ২০০৯ তথ্য অধিকার আইন জারি
করে। জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই আইন প্রণীত হয়।
দৃশ্যপট-২ এ সালমা বেগম নিজ জমিজমা সংক্রান্ত
কাগজপত্র আনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে তথ্য অধিকার আইনের সহায়তা নেন। ফলশ্রুতিতে তিনি
তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহজেই পেয়ে যান। আমাদের দেশের ন্যায় পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রেই
তথ্য অধিকার আইন রয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায় যেকোনো ধরনের রেকর্ডই তথ্য। তথ্য অধিকার
আইনে তথ্য বলতে কোনো কর্তৃপক্ষের গঠন, কাঠামো ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত যেকোনো
স্মারক, বই, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, লগবহি, আদেশ-বিজ্ঞপ্তি, দলিল, নকল-কপি,
পত্র, প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, প্রকল্প প্রস্তাব, আলোকচিত্র, অডিওভিডিও, অঙ্কিত চিত্র,
ফিল্ম, ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত যেকোনো ইন্সট্রুমেন্ট, যান্ত্রিকভাবে পাঠযোগ্য
দলিলাদি এবং ভৌত গঠন ও বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে সকল তথ্যবহ বস্তু বা এদের প্রতিলিপিকে
বুঝানো হয়েছে। বর্তমানে তথ্য অধিকার আইনে 'তথ্য কমিশন' নামে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান
সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কমিশনের কাজ হলো অভিযোগ গ্রহণ করা ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেওয়া।
পরিশেষে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক হয়েছে বলা যায়।
প্র্যাকটিস
প্রশ্ন ১. বর্তমান সরকার বাংলাদেশের
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের কথা চিন্তা করে স্বপ্নের 'পদ্মাসেতু' নির্মাণের উদ্যোগ
নিয়েছেন। সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। তবুও সরকার চ্যালেঞ্জ
নিয়েছে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে এবং দ্রুত ও স্বল্প সময়ে রাজধানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা
করার।
ক. নাগরিকের প্রধান কর্তব্য কী?
খ. সুশাসনের জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা
কর।
গ. উদ্দীপকে সরকারের কোন ধরনের ঐচ্ছিক কাজের
প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সরকারের ঐচ্ছিক কাজ কি উক্ত কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ?
যৌক্তিক বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্ন ২. বিত্তশালী আশরাফ আলীর
তিন পুত্র ও এক কন্যা। মি. আশরাফ কন্যার বিয়েতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। তাঁর মৃত্যুর
পর তাঁর তিন ছেলে সমস্ত সম্পদ নিজেরা ভাগ করে নেয়। বোনকে কিছুই দেয় না। এতে আশরাফ সাহেবের
কন্যা তার ভাইদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়।
ক. রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা
কে দিয়েছেন?
খ. রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বলতে কী বোঝ?
গ. আশরাফ সাহেবের তিন পুত্র আইনের অনুশাসন ব্যাহত
করেছে কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "আশরাফ সাহেবের কন্যা সুশাসনের মাধ্যমে
তার অধিকার ফিরে পেতে পারে।" বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্ন ৩. জনাব 'ক' সরকারের একটি
বিভাগের সদস্য। সে বিভাগে তিনি সম্প্রতি দেশের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে কিছু বিধিনিষেধ
প্রস্তাব করেন। উপস্থিত সকলের মধ্যে অধিকাংশের সম্মতিতে তার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। ফলে
কারেন্ট জালে মাছ ধরার ওপর বিধি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
ক. এরিস্টটল কোন দেশের অধিবাসী?
খ. নাগরিকত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আইনের উৎসটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত উৎসটি কী আইনের একমাত্র উৎস? তোমার উত্তরের
স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।
প্রশ্ন ৪. প্রেক্ষাপট-১: জামিল
সাহেব জমির খাজনা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য ভূমি অফিসে যান। কিন্তু তারা তাকে
সহযোগিতা না করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতে থাকে। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে তথ্য না পাওয়ায়
তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করেন। অবশেষে তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সফল হন।
প্রেক্ষাপট-২: পোশাক শিল্পের স্থিতিশীলতার জন্য
বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি, কাজের সময় নির্ধারণ এবং কাজের উন্নত পরিবেশ
সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার বিধবা ভাতা, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক
বিতরণ, খাদ্য সাহায্যের মতো নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ক. অধ্যাপক গার্নারের রাষ্ট্র সম্পর্কিত সংজ্ঞাটি
লেখ।
খ. "আইনের চোখে সবাই সমান"-ব্যাখ্যা
কর।
গ. জামিল সাহেব কোন আইনের সহায়তায় তার তথ্য পেলেন?
ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপট-২-এর আলোকে বাংলাদেশকে কি কল্যাণমূলক
রাষ্ট্র বলা যায়? উত্তর
প্রশ্ন
১। আইন কাকে বলে? [য. বো. '২০; রা. বো. '১৯]
উত্তর: সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক
স্বীকৃত এবং মানুষের সামাজিক
কল্যাণের জন্য গৃহীত সুনির্দিষ্ট নিয়মের সমষ্টিকেই
আইন বলে।
প্রশ্ন
২। তথ্য অধিকার আইন কী? [কু. বো. '২০]
উত্তর: জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে আইন
প্রণীত হয় তাই তথ্য অধিকার আইন।
প্রশ্ন
৩। অ্যারিস্টটল প্রদত্ত নাগরিকের সংজ্ঞাটি লেখ। [চ. বো, '২০]
উত্তর: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞায় বলেছেন, '
সে ব্যক্তিই নাগরিক যে নগররাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব ও শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ
করে।
প্রশ্ন
৪। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা লেখ। [ব. বো. '২০]
উত্তর: রাষ্ট্র হলো একটি ভূখণ্ডভিত্তিক সমাজ বিশেষ যার সংগঠিত সরকার ও
জনসমষ্টি রয়েছে এবং যার নিজস্ব ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর
সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত আছে।
প্রশ্ন
৫। অ্যারিস্টটলের মতে রাষ্ট্র কী? [দি. বো. '২০
উত্তর: অ্যারিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র হলো স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের জন্য কতিপয়
পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন।
প্রশ্ন
৬। নাগরিক কাকে বলে? [য.বো. '১৯; সি. বো. '১৯; দি. বো. '২০; ম.বো. '২০]
উত্তর: যে ব্যক্তি কোনো রাষ্ট্রে স্থায়িভাবে বসবাস করে, রাষ্ট্রের প্রতি
আনুগত্য স্বীকার করে, রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য
পালন করে, তাকে ঐ রাষ্ট্রের নাগরিক বলে।
প্রশ্ন
৭। অধ্যাপক গার্নারের রাষ্ট্র সম্পর্কিত সংজ্ঞাটি লেখ। [ঢা.বো. '১৯]
উত্তর: রাষ্ট্র সম্পর্কে অধ্যাপক গার্নারের সংজ্ঞাটি হলো "রাষ্ট্র
হলো বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক জনসমাজ, যারা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়িভাবে
বসবাস করে। যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে।
যে সরকারের প্রতি ঐ জনসমাজ স্বভাবতই অনুগত।"
প্রশ্ন
৮। আর, এম, ম্যাকাইভারের মতে রাষ্ট্র কী? [চ.বো.'১৯]
উত্তর: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আর. এম. ম্যাকাইভারের মতে, রাষ্ট্র হচ্ছে সরকার
কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা পরিচালিত একটি সংগঠন, যার কর্তৃত্বমূলক ক্ষমতা রয়েছে এবং
যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসরত অধিবাসীদের উপর বলবৎ হয়।
প্রশ্ন
৯। টি. এইচ. গ্রিনের মতে আইন কী? [সকল বোর্ড '১৮]
উত্তর: টি. এইচ. গ্রিনের
মতে 'রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত অধিকার এবং বাধাবাধ্যকতাসমূহ আইন'।
প্রশ্ন
১০। 'The Modern State' গ্রন্থের লেখক কে? [রা. বো. '১৭; ব. বো, '১৭]
উত্তর: 'The Modern
State' গ্রন্থের লেখক আর. এম ম্যাকাইভার।
প্রশ্ন
১১। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মোনাকোর জনসংখ্যা কত? [কু. বো. '১৭]
উত্তর: ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মোনাকোর জনসংখ্যা ৩৮,৯৬৩। প্রশ্ন ১২। নাগরিকের
প্রধান কর্তব্য কী? [চ. বো, '১৭]
উত্তর: নাগরিকের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের
প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা।
প্রশ্ন
১৩। এরিস্টটল কোন দেশের অধিবাসী? [সি. বো. '১৭]
উত্তর: এরিস্টটল গ্রিসের অধিবাসী।
প্রশ্ন
১৪। রাষ্ট্র সম্পর্কে এরিস্টটল প্রদত্ত সংজ্ঞাটি লেখ। [দি.বো. '১৭]
উত্তর: রাষ্ট্র সম্পর্কে এরিস্টটল বলেন, "স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের জন্য
কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র।"
প্রশ্ন
১৫। অধ্যাপক হল্যান্ড কর্তৃক প্রদত্ত আইনের সংজ্ঞাটি লিখ. [ঢা.বো.'১৬]
উত্তর: অধ্যাপক হল্যান্ডের
মতে, "আইন হচ্ছে মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের কতকগুলো সাধারণ নিয়ম যা সার্বভৌম
শক্তি কর্তৃক প্রণীত হয়।"
প্রশ্ন
১৬। রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা কে দিয়েছেন? [রা.বো. '১৬, '১৫]
উত্তর: রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা দিয়েছেন অধ্যাপক গার্নার।
প্রশ্ন
১৭। রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান কোনটি? [য. বো.'১৬]
উত্তর: রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান হলো সার্বভৌমত্ব।
প্রশ্ন
১৮। এরিস্টটল প্রদত্ত নাগরিকের সংজ্ঞাটি লেখ।
উত্তর: এরিস্টটল প্রদত্ত নাগরিকের সংজ্ঞাটি হলো, "সেই ব্যক্তিই নাগরিক
যে নগররাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।"
প্রশ্ন
১৯। নাগরিক শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর: নাগরিক শব্দের ইংরেজি
প্রতিশব্দ হলো Citizen.
প্রশ্ন
২০। সাধারণভাবে আইনের অনুশাসন কয়টি ধারণা প্রকাশ করে?
উত্তর: সাধারণভাবে আইনের অনুশাসন দুটি ধারণা প্রকাশ করে।
প্রশ্ন
২১। রাষ্ট্র কী?
উত্তর: রাষ্ট্র হলো একটি
ভূখণ্ডভিত্তিক সমাজ বিশেষ যার সংগঠিত সরকার, জনসমষ্টি ও নিজস্ব সীমানার সার্বভৌমত্ব
রয়েছে।
প্রশ্ন
২২। নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকার সংবিধানের কত অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে?
উত্তর: নাগরিকের তথ্য পাওয়ার
অধিকার সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা আছে।
প্রশ্ন
২৩। আইনের প্রধান উৎস কয়টি?
উত্তর: আইনের প্রধান উৎস ৬টি।
প্রশ্ন
২৪। "রাষ্ট্র যদি হয় জীবদেহ তবে সরকার হলো এর মস্তিস্তস্বরূপ"-উক্তিটি কার?
উত্তর: "রাষ্ট্র যদি হয় জীবদেহ তবে সরকার হলো মস্তিষ্কস্বরূপ"-
উক্তিটি অধ্যাপক গার্নারের।
প্রশ্ন
২৫। আইনের উৎস কয়টি?
উত্তর: আইনের উৎস ৬টি।
প্রশ্ন
২৬। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র কয়টি?
উত্তর: গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র
তিনটি।
প্রশ্ন
২৭। রাষ্ট্রগঠনের মূল উপাদান কয়টি?
উত্তর: রাষ্ট্র গঠনের মূল উপাদান ৪টি যথা- জনগণ, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার
ও সার্বভৌমত্ব।
প্রশ্ন:
২৮৮ বাংলাদেশ সরকার কত সালে তথ্য অধিকার আইন জারি করে?
উত্তর: বাংলাদেশ সরকার ২০০৯
সালের ৫ এপ্রিল তথ্য অধিকার আইন জারি করে।
প্রশ্ন
২৯। আইনের ছয়টি প্রধান উৎসের উল্লেখ করেছেন কে?
উত্তর: আইনের ছয়টি প্রধান
উৎসের উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হল্যান্ড।
প্রশ্ন
৩০। নাগরিক শব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে?
উত্তর: নাগরিক শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Civics থেকে এসেছে।
প্রশ্ন
৩১। পৌরনীতি পাঠের মূল বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: পৌরনীতি পাঠের মূল
বিষয়বস্তু হচ্ছে নাগরিক।
প্রশ্ন
৩২। আইনের সবচেয়ে প্রাচীনতম উৎস কী?
উত্তর: আইনের সবচেয়ে প্রাচীন উৎস হলো প্রথা।
প্রশ্ন
৩৩। আইনের শাসন কী?
উত্তর: আইনের শাসন মানেই
হলো সুশাসন
অনুধাবনমূলক
প্রশ্ন
প্রশ্ন-১। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।
উত্তর: সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও মানব কল্যাণে গৃহীত নিয়মের সমষ্টিই আইন। এর
বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
১. আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ ও ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ
করে।
২. আইন সার্বজনীন।
৩. আইন মানতে সকলে বাধ্য থাকে। অমান্য করলে সাজা
পেতে হয়।
৪. আইন রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও আরোপিত।
প্রশ্ন ২। "দুর্নীতি এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক নাগরিকের
দায়িত্ব।" উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রত্যেক নাগরিককেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
জানাতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রের বেআইনি কোনো কাজের বিরুদ্ধে রুখে
দাঁড়ানো নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। এটি দেশপ্রেমের অংশ। রাষ্ট্রে সকলের কল্যাণার্থে,
দেশের মঙ্গলের জন্য, একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের
বিকল্প নেই।
প্রশ্ন ৩। সুনাগরিক আত্মসংযমী হবে কেন? ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: সুনাগরিককে অবশ্যই আত্মসংযমী হতে হবে। কোনো প্রতিকূল পরিবেশে
যদি নাগরিক নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তখন সমাজে তা বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে।
আত্মসংযম, ন্যায়বিচার হচ্ছে ব্যবহারিক ও নাগরিক জীবনের সার্থকতার অন্যতম পূর্বশর্ত।
আইন নিজের হাতে তুলে নিলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তাই সুনাগরিককে আত্মসংযমী
হতে হবে।
প্রশ্ন ৪। জনসমষ্টিকে কেন রাষ্ট্রের প্রাথমিক উপাদান বলা হয়?
উত্তর: জনসমষ্টিকে রাষ্ট্রের প্রাথমিক উপাদান বলা হয় কেননা জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্রের
কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
যদিও কোন ধরাবাঁধা সংখ্যা নেই তথাপি ঐক্যবদ্ধ
জনসমষ্টি ব্যতীত সরকার, সার্বভৌমত্ব ও নির্দিষ্ট সীমানা অর্থহীন। জনসমষ্টির ঐক্যবদ্ধ
হবার ইচ্ছা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক হতেই রাষ্ট্র ধারণার উদ্ভব।
প্রশ্ন ৫। কর প্রদান করা নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস নাগরিকদের প্রদেয় কর। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রতিরক্ষা
এবং উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদনের
জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। তাই নাগরিকদের
যথাসময়ে কর প্রদান করে রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতা করতে হবে। এ কারণেই কর প্রদান করা নাগরিকদের
অন্যতম দায়িত্ব। তাই প্রশ্নোক্ত এ বক্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন ৬। সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: রাষ্ট্রের পরিপূর্ণ গঠনের জন্য সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান সার্বভৌমত্ব, সার্বভৌমত্ব শব্দ দ্বারা চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতাকে
বোঝায়। সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গঠন পূর্ণতা পায়। এ ক্ষমতা রাষ্ট্রকে
অন্যান্য সংস্থা থেকে পৃথক করে। এর ফলে নিজের ইচ্ছা ছাড়া অন্য কোনো প্রকার ইচ্ছার দ্বারা
রাষ্ট্র আইনসঙ্গতভাবে আবদ্ধ নয়।
প্রশ্ন ৭। আইনের প্রধান উৎসটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আইনসভাই হচ্ছে আইনের প্রধান উৎস। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেরই আইনসভা রয়েছে
বা আইন পরিষদ রয়েছে। এরা রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। আইনসভার সদস্যগণ
জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন রকম আইন প্রণয়ন করে।
প্রশ্ন ৮। "দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব"।
উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রত্যেক নাগরিককেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
জানাতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রের বেআইনি কোনো কাজের বিরুদ্ধে রুখে
দাঁড়ানো নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। এটি দেশপ্রেমের অংশ। রাষ্ট্রে সকলের কল্যাণার্থে,
দেশের মঙ্গলের জন্য, একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের
বিকল্প নেই।
প্রশ্ন ৯। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের প্রধান কর্তব্যের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: রাষ্ট্র যেমন নাগরিকদের বিবিধ সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার দিয়ে থাকে
তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকদের কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। আর নাগরিকদের
প্রধান কর্তব্য হচ্ছে
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। অর্থাৎ
রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলা। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও অক্ষুণ্ণ রাখার
জন্য প্রত্যেক নাগরিককে সর্বদা সজাগ এবং চরম ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য তৃতীয় উপাদানটির বর্ণনা দাও।
উত্তর: রাষ্ট্র গঠনের অপরিহার্য তৃতীয় উপাদানটি হলো সরকার। সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট
ভূখণ্ডের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন আংশিকভাবে সম্পন্ন হয়।
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনটি বিভাগ থাকে। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এসব
বিভাগের সমন্বয়ে সরকার গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে
জনগণ তাদের সরকার গঠন করে। সরকার পদ্ধতি বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন হতে পারে। রাষ্ট্রের
ক্ষমতা সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়।
প্রশ্ন ১১। রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সামাজিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি হলো রাষ্ট্র।
.png)
Social Plugin