আম আঁটির ভেঁপু
বিভূতিভূষণ
বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখক পরিচিতি:
জন্ম ও শৈশব: ১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
সালে পশ্চিমবঙ্গের
চব্বিশ পরগনার মুরারিপুর গ্রামে, মাতুলালয়ে।
তাঁর পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম
মহানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাতা মৃণালিনী দেবী।
শিক্ষাজীবন: স্থানীয় বনগ্রাম স্কুল থেকে ১৯১৪
সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আই.এ. এবং বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন: তিনি হুগলী, কলকাতা
ও ব্যারাকপুরের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
লেখার বিষয়: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ও গ্রামবাংলার সাধারণ
মানুষের সহজ-সরল জীবন-যাপন। প্রকৃতি এবং মানুষের
জীবনের অভিন্ন সম্পর্কের চিরায়ত তাৎপর্য। তাঁর রচিত সাহিত্যে প্রকৃতি ও মানবজীবন এক
অখণ্ড অবিচ্ছিন্ন সত্তায় সমন্বিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম: উপন্যাস: পথের পাঁচালী,
অপরাজিত, আরণ্যক, ইছামতি, দৃষ্টিপ্রদীপ। গল্পগ্রন্থ: মেঘমল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল।
ভ্রমণ-দিনলিপি: তৃণাঙ্কুর, স্মৃতির রেখা। কিশোর উপন্যাস: চাঁদের পাহাড়, মিসমিদের কবচ,
হীরামাণিক জ্বলে।
বিশেষ তথ্য: শরৎচন্দ্রের পরে তিনি
বাংলা কথাসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী। 'ইছামতি' উপন্যাসের জন্য তিনি রবীন্দ্র-পুরস্কারে
ভূষিত হন।
মৃত্যু: ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের
১লা নভেম্বর।
গল্পের মূলভাব:
গল্পটিতে শিশুর আনন্দপূর্ণ শৈশব এবং প্রকৃতির
সম্পর্ক দেখিয়েছেন গল্পের সারসংক্ষেপ:
'আম-আঁটির ভেঁপু' শীর্ষক গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
'পথের পাঁচালী' উপন্যাস থেকে সংকলন করা হয়েছে।
গ্রামীণ জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের আনন্দিত
জীবনের আখ্যান নিয়ে গল্পটি রচিত হয়েছে। অপু ও দুর্গা হতদরিদ্র পরিবারের শিশু। কিন্তু
তাদের শৈশবে দারিদ্র্যের সেই কষ্ট প্রধান হয়ে ওঠেনি। গ্রামীণ ফলফলাদি খাওয়ার আনন্দ
এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাদের বিস্ময় ও কৌতূহল গল্পটিকে মানুষের চিরায়ত শৈশবকেই যেন
স্মরণ করিয়ে দেয়। এই গল্পের সর্বজয়া পল্লি-মায়ের শাশ্বত চরিত্র হয়ে উঠেছে।
চরিত্র পরিচিতি:
হরিহর: 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
অন্যতম প্রধান চরিত্র হরিহর। সে গরিব ব্রাহ্মণ, তার উপাধি রায়। সে নিজ গ্রামের জমিদার
অন্নদা রায়ের বাড়িতে মাসিক আট টাকা বেতনে গোমস্তার কাজ করে। এই আয় দিয়ে স্ত্রী সর্বজয়া
এবং দুই ছেলে-মেয়ে অপু-দুর্গাকে নিয়ে জীবনযাপন করে। অর্থের অভাবে সে ভাঙা ঘর মেরামত
করতে পারে না। হরিহর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হলেও
আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজ সে করতে চায় না। এই কারণে দশঘরার সদগোপরা তাকে মন্ত্র
দিতে বললে তখনই সে রাজি হয় না। ধার-দেনা করে সংসার চালাতে গিয়ে সে নানা কথা সহ্য করে।
তবুও সে অধৈর্য হয় না। এদিক থেকে হরিহর ধীরস্থির।
সর্বজয়া: 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
অন্যতম প্রধান চরিত্র সর্বজয়া। সে ব্রাহ্মণ হরিহরের স্ত্রী, অপু-দুর্গার স্নেহময়ী মা।
ছেলে-মেয়ে দুটি কথা না শুনলেও তাদের প্রতি বিরক্ত নয়। সে সংসারের নানা কাজে সবসময় ব্যস্ত
থাকে। সে অভাবের কারণে ঋণ করে, যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদারদের কথা শোনে।
অভাবে জর্জরিত হয়েও সে ধৈর্য হারায় না। দশঘরার সদগোপদের মন্ত্র দিয়ে সংসারের আয় বাড়াতে
সে হরিহরকে তাড়া দেয়। ছেলে-মেয়ের কথা ভেবে সে আবেগে আপ্লুত হয়। তার চরিত্রে গ্রামীণ
পরিবেশে নিম্নবিত্ত অভাবী মানুষের জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে। সে একজন ধৈর্যশীল নারী, স্নেহময়ী
মা। বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা-সংকটে সে ধৈর্যশীল ও আত্মসচেতন দুর্গা: দুর্গা 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের হরিহর ও সর্বজয়ার বড় সন্তান। দুর্গা দশ-এগারো বছরের কিশোরী। স্বভাব অতি
চঞ্চল বলে সে সারা পাড়ার বাগান, আমতলা, জামতলা প্রভৃতি স্থানে ঘুরে বেড়ায়। ছোট ভাই
অপু তার খেলার সঙ্গী। ছোট ভাইকে সে যেমন আদর করে, তেমনই আবার মারে, ভয় দেখায়, শাসায়।
সংসারের কাজে উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে মা সর্বজয়াকে কোনো কাজে সাহায্য করে না। কৈশোরের
দুরন্তপনায় সংসারের অভাব তাকে ব্যথিত করে না। সে ময়লা জামা পরে কাচের চুড়ি হাতে দিয়ে
রুক্ষ চুল উড়িয়ে আনন্দে ছুটে বেড়ায়। ছোট ভাই অপুর সঙ্গে খুনসুটি করে, পুতুল খেলে, রোড়া
ফলের বিচি কুড়ায়। এককথায় দুর্গা স্বভাবে চঞ্চল, প্রাণোচ্ছল এবং প্রকৃতির রাজ্যে ছুটে
বেড়ানো এক স্বাধীন কিশোরী, যাকে সংসারের অভাবের বিষাদ স্পর্শ করতে পারে না।
অপু: অপু 'আম-আঁটির ভেঁপু'
গল্পের হরিহর ও সর্বজয়ার ছোট সন্তান। অপু দুর্গার ছোট ভাই। দুর্গাকে সে দিদি বলে ডাকে।
দুর্গা তাকে দিয়ে ছোটখাটো কাজ করায়। সে আপনমনে খেলা করে। তার একটি টিনের বাক্স আছে;
সেটিতে রাখা সে রং ওঠা কাঠের ঘোড়া, চার পয়সা দামের টোল-খাওয়া টিনের ভেঁপু-বাঁশি, কয়েকটি
কড়ি, দুপয়সা দামের পিস্তল, কতগুলো শুকনো নাটা ফল, কয়েকটি খাপরা কুচি তার খেলার সামগ্রী।
সে খাপরা দিয়ে গঙ্গা-যমুনা খেলে। অপু তার দিদি দুর্গার খেলার সঙ্গী। বয়সে ছোট বলে দুর্গার
মতো বুদ্ধি তার নেই। মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়ার মতো সে চালাকি করতে পারে না। এ কারণে দুর্গা
তাকে 'হাবা একটা কোথাকার' বলে শাসালেও সে চুপ থাকে। সে স্বভাবে দুর্গার মতো চঞ্চল নয়।
দুর্গা আম কুড়িয়ে এনে তেল-লবণ দিয়ে মাখালে তাকে খানিকটা খেতে দেয়। আরেকটু মাখানো আম
দেওয়ার জন্য দিদির কাছে আকুতি জানায়। অপু তার মা সর্বজয়াকে ভয় পায়। অপুর চরিত্রে দরিদ্র
পরিবারের শিশুর স্বভাব-বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে.
স্বর্ণ গোয়ালিনী: 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
বিকাশহীন নারী চরিত্র। সে অপুদের গাভীর দুধ দোহায়। সর্বজয়া তাকে 'সন্ন' বলে ডাকে।
অন্যান্য বিকাশহীন চরিত্র
হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভাই নীলমণি রায় ও তার স্ত্রী-পুত্র
কন্যা।
দশঘরার সদগোপ সম্প্রদায়ের পয়সাওয়ালা একজন লোক।
সেজ ঠাকুরণ এবং রাধা বোষ্টমের বউ।
বোর্ডবইয়ের অতিরিক্ত শব্দার্থ ও টীকা
ভেঁপু-বাঁশিবিশেষ।
সমুদয়- সমস্ত, সকল, সমষ্টি।
উপুড়-উল্টোমুখী, ভূমির দিকে মুখ করা এমন।
অজ্ঞাতসারে- গোপনে, অগোচরে, কাউকে
না জানিয়ে।
খানকতক- কয়েকখানা, কয়েকটি।
লক্ষ্য - উদ্দেশ্য, তাক, নিশানা।
অব্যর্থ-কখনো বিফল হয় না এরূপ, অমোঘ।
বিশ্বাস- সত্য বলে বিবেচনা, প্রত্যয়, নির্ভর,
আস্থা, ভরসা।
সযত্ন- যত্নযুক্ত, আদরযুক্ত, সাদর।
মহামূল্যবান - খুব দামি, দুর্মূল্য,
অতি উচ্চ শ্রেণির।
কৌতূহল- নতুন বা অজ্ঞাত বিষয় জানার আগ্রহ, ঔৎসুক্য।
কল্পনা - জাগ্রত স্বপ্ন, মনগড়া বিষয়, ধারণা, আন্দাজ,
অনুমান।
সতর্কতা-সাবধানতা, হুঁশিয়ার
মিশ্রিত- মিশানো হয়েছে এমন, ভেজাল দেওয়া হয়েছে
এমন।
আওয়াজ-শব্দ, ধ্বনি, কণ্ঠস্বর।
ডাগর ডাগর - বড় বড়, মোটাসোটা।
আহ্লাদ- আনন্দ, আমোদ, আশকারা, হর্ষ।
খিড়কি-জানালা, বাতায়ন।
দোর-দুয়ার, দরজা।
হাবা-গোবেচারা, অতিশয় নির্বোধ, স্থূলবুদ্ধি।
নাগাল - নৈকট্য, সংস্পর্শ, কাছে পাওয়া, আপন
হিসেবে পাওয়া।
জ্ঞাতি-একই বংশে জাত ব্যক্তি, সগোত্র।
পিত্রালয়-বাবার বাড়ি, পিতৃগৃহ।
মেরামত - প্রস্তুত যে ভূমিতে বাসগৃহ নির্মিত হয়,
ঘরের ভিত।
কপাট-দরজার পাল্লা, দরজার দুই পাট।
অবশিষ্ট- বাকি, উদ্বৃত্ত, অতিরিক্ত।
গোগ্রাসে- গরুর মতো বড় গ্রাসে
দ্রুত গলাধঃকরণ।
ফাই-ফরমাজ- ছোটখাটো হুকুম তামিল।
সঙ্কুচিত- জড়সড়, কুণ্ঠিত, কোঁকড়ানো,
অপ্রসারিত।
ভ্রুকুটিমিশ্রিত- ক্রোধ বিরক্তি ইত্যাদি
প্রকাশের জন্য ভ্রুকুঞ্চন মেশানো ভাব।
বিপন্নমুখে-সংকটাপন্নমুখে, বিপদগ্রস্ত
মুখ করে।
লক্ষ্মীছাড়া - শ্রীভ্রষ্ট, দুর্ভাগ্যযুক্ত,
হতভাগ্য, দুষ্ট।
তাগাদা - প্রাপ্য বস্তু দেওয়ার বারবার দাবি বা
বা অনুরোধ
গোমস্তা - তহসিলদার, যে কর্মচারী
খাজনা আদায় করে খাজনা আদায়কারী
দণ্ডবৎ- দন্ডের মতো ভূমিতে লুটিয়ে সাষ্টাঙ্গে
প্রণাম।
মন্তর-মন্ত্র।
ভাব-স্বপ্রকৃতি, আত্মভাব, স্বরূপ, গুণ, চরিত্র।
দেনা-ধার, কর্জ, ঋণ।
বন্ধক-ঋণের জামিনস্বরূপ কোনো জিনিস জমা রাখা-
আশ্রয়-রক্ষক, সহায়, অবলম্বন, আধার।
রাজি-সম্মত, মেনে নেওয়া হয়েছে এমন।
পরামর্শ- যুক্তি, মন্ত্রণা, উপদেশ।
আড়াল-অন্তরাল, পর্দা, আবরণ।
সতর্কতা - সাবধানতা, হুঁশিয়ার।
নিরুৎসাহ-উৎসাহহীন, হতাশ, নিরাশ,
হতোদ্যম।
রাক্ষস-রাক্ষস, নরখাদক জাতি, পেটুক।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
শরৎচন্দ্রের পরে বাংলা কথাসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয়
কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
'আম-আঁটির ভেঁপু' শীর্ষক গল্পটি তাঁর 'পথের পাঁচালী'
উপন্যাসের অংশবিশেষ।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পটি পল্লির প্রকৃতিঘনিষ্ঠ
দুই ভাই-বোনের আনন্দঘন শৈশবের আখ্যান নিয়ে রচিত।
অপু ও দূর্গা 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের প্রধান
দুটি চরিত্র।
হরিহর-সর্বজয়ার সংসারের মধ্য দিয়ে পল্লিবাংলার
দারিদ্র্যপীড়িত জনজীবনের করুণ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের দশ-এগারো বছর বয়সী দুর্গা
সারাদিন পাড়াময় ঘুরে বেড়িয়ে গ্রামের অতি সাধারণ ফল, আমের কুসি, কুচ, নাটা ফল সংগ্রহ
করে। ভাই অপুকে নিয়ে তার আনন্দময় জগৎ তৈরি করে নিয়েছে।
অপুর দিদির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমতা রয়েছে
যা পল্লির সহজ-সরল ভাই-বোনের মধুর সম্পর্ককে মনে করিয়ে দেয়।
অপু-দুর্গা চরিত্রের মাধ্যমে লেখক বাঙালির চিরায়ত
শৈশবকে স্মরণ করিয়ে দেন।
গুরুত্বপূর্ণ লাইনের ব্যাখ্যা:
লাইন ১: বাক্সের সমুদয় সম্পত্তি
ব্যাখ্যা: ছোটদের খেলার সামগ্রী
তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় সম্পত্তি। তারা সেগুলো এক জায়গাতেই জড়ো করে রাখে। বাক্সের
সমুদয় সম্পত্তি বলতে তাদের সব খেলনা বোঝানো হয়েছে।
লাইন ২: খানকতক খাপরার কুচি--
ব্যাখ্যা: মাটির তৈরি হাঁড়ি-কলসির
ভাঙা অংশ যা 'গঙ্গা যমুনা' নামের বিশেষ এক ধরনের গ্রাম্য খেলার সময় ছুড়ে মারার জন্য
ব্যবহৃত হয়।
লাইন ৩: সেটির সম্বন্ধে বিগত
কৌতূহল হইয়া-
ব্যাখ্যা: কোনোকিছু আগ্রহ সহকারে
শুরু করার পরে সেই কাজটি করতে আর আনন্দ না পেয়ে পাশে রেখে অন্যকিছুর প্রতি মনোনিবেশ
করা।"
লাইন ৪: পিঁজরাপোলের আসামির
ন্যায়-
ব্যাখ্যা: দীর্ঘদিন বন্দি অবস্থায়
থাকা অবহেলিত আসামির কথা বলা হয়েছে, যার প্রতি কোনো কৌতূহল বা উৎকণ্ঠা কারও থাকে না।
লাইন ৫: তাহার স্বর একটু সতর্কতা
মিশ্রিত-
ব্যাখ্যা: কাউকে চাপাস্বরে আহ্বান
করার সময় সতর্ক থাকে, যেন যাকে ডাকা হচ্ছে সে ছাড়া অনাকাঙিক্ষত অন্য কেউ না শোনে। শুনলেই
উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়ার আশঙ্কা।
লাইন ৬: আমের কুসি জারাবো-
ব্যাখ্যা: আমের ছোট গুটিকে আমের
কুসি বলা হয়। গ্রামের , বালক-বালিকারা গাছতলা থেকে আমের সেই গুটি কুড়িয়ে এনে কুচি কুচি
করে কেটে তেল-লবণ-মরিচ দিয়ে মাখিয়ে খায়। এই মাখানোকেই বলে আমের কুসি জারানো।
লাইন ৭: তেলের ভাঁড় ছুঁলে মা
মারবে যে? আমার কাপড় যে বাসি?
ব্যাখ্যা: সেকালের গ্রামীণ হিন্দু
সমাজে নানা ধরনের সংস্কার ছিল। সকালে স্নান না করে আগের দিনের পরা কাপড়কে বাসি কাপড়
বলা হতো এবং তা পরা থাকলে কোনোকিছুতে হাত দেওয়া নিষেধ ছিল।
লাইন ৮: তুই অতগুলো খাবি দিদি?
ব্যাখ্যা: আমের কুসি জারানোর
পর দিদি ছোট ভাইকে ভাগ করে দেওয়ার সময় ভাইটি নিজের ভাগের চেয়ে দিদির ভাগে বেশি পরিমাণ
অনুমান করে কথাটি বলেছে।
লাইন ৯: আমি যে নাগাল পাই নে?
ব্যাখ্যা: বয়সে এবং উচ্চতায় ছোট
হওয়ায় উঁচুতে রাখা মরিচ আনার সময় সেটাকে ছুঁতে না পারা বা সংগ্রহ করতে না পারার কথা
বলা হয়েছে।
লাইন ১০: দুর্গাদের বাড়ির চারিদিকেই
জঙ্গল।
ব্যাখ্যা: দুর্গাদের বাড়িটার
চারপাশে অনেক পতিত জমি থাকায় সেখানটা জঙ্গলাকীর্ণ।
লাইন ১১: কারণ চিবাইয়া খাওয়ার
আর সময় নাই।
ব্যাখ্যা: অপু-দুর্গা জারানো
আমের কুসি খাচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে।
হঠাৎ মায়ের আহ্বান, তাই, তারা গোগ্রাসে সেগুলো
গিলতে লাগল। কারণ চিবিয়ে খেতে গেলে মায়ের কাছে যেতে তাদের দেরি হয়ে যাবে।
লাইন ১২: কুটোগাছটা ভেঙে দু খানা
করা নেই।
ব্যাখ্যা: কোনো কাজে সাহায্য
না করার কারণে মা বলেছেন মেয়ে দুর্গাকে।
লাইন ১৩: কেবল পাড়ায় পাড়ায় টোটো
টোকলা সেধে বেড়াচ্ছেন।
ব্যাখ্যা: সংসারের কোনো কাজ না
করে সারা গ্রামে উদ্দেশ্যহীন ও অযাচিতভাবে দুর্গার ঘুরে বেড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
লাইন ১৪: দুর্গার ভ্রুকুটিমিশ্রিত
চোখ।
ব্যাখ্যা: দুর্গার চাহনিতে তিরষ্কার
ও সতর্কতামূলক সংকেত।
লাইন ১৫: তোমার তো আবার গল্প
করে বেড়ানোর স্বভাব।
ব্যাখ্যা: সর্বজয়ার মুখপাতলা
স্বভাবের জন্য হরিহর রায় তাকে তিরস্কার করে বলেছেন যেন গোপন কথা গল্পচ্ছলে কাউকে না
বলে।
লাইন ১৬: আজকাল চাষাদের ঘরে
লক্ষ্মী বাঁধা
ব্যাখ্যা: কথাটির মাধ্যমে পরিশ্রমী
মানুষের কাছে সৌভাগ্য ধরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
লাইন ১৭: আগ্রহে সর্বজয়ার কথা
বন্ধ হইবার উপক্রম।
ব্যাখ্যা: কোনো খুশির বা প্রত্যাশিত
সংবাদ শোনার পরে উত্তেজনায় ঠিকমতো কথা বের না হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
লাইন ১৮: অপরপক্ষ পূর্ণ সজাগ
দেখিয়া-
ব্যাখ্যা: দুর্গা তীব্র রৌদ্রে
সারা গ্রাম ঘুরে এসে দেখে তার বাবা-মা এখনও দুপুরে ঘুমাতে না গিয়ে জেগে আছেন। তাই সে
তাঁদের সজাগ দেখে সামনে যেতে সাহস করেনি।
.png)
Social Plugin