আম আঁটির ভেঁপু
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সৃজনশীল
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১। একই পরিবারের মকবুল, আবুল, সুরত সবাই বেশ পরিশ্রমী। নিজেদের
জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গাচাষ করে, লাকড়ি কাটে, মাঝিগিরি করে, কখনো কখনো অন্যের
বাড়িতে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের স্ত্রীরাও বসে নেই। ভাগ্যের উন্নতির জন্য
পাতা দিয়ে পাটি বোনে, বাড়ির আঙিনায় মরিচ, লাউ, কুমড়া ফলায়, বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে
বিক্রি করে। কোনো রকমে জীবন চলে যাচ্ছে তাদের.
ক. দুর্গার বয়স কত?
খ. বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি
হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের ফুটে ওঠা
দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকটি 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
মূলভাবকে কতটুকু ধারণ করে?" যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখ।
১নং প্রশ্নের
উত্তর
ক. দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর।
খ. বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর তখনই
রাজি হয়নি, কারণ তাতে প্রস্তাবকারী তাকে খুব অভাবী ও উপবাসী মনে করতে পারে।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে গ্রামীণ জীবনে নিম্ন
আয়ের এক ব্রাহ্মণ পরিবারের দুঃখ, দুর্দশা ও টানাপড়েন সমকালীন ভাষায় প্রাণিত হয়ে উঠেছে।
হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে মাসে আট টাকা পায়। তাতে তাদের চারজনের সংসার ঠিকমতো
চলে না। ছেলে-মেয়েকে তারা প্রয়োজন মতো খাবার ও পোশাক দিতে পারে না। সে দশঘরায় তাগাদার
জন্য
গেলে সেখানে একজন মাতব্বর গোছের লোক তাকে তাদের
ব্রাহ্মণ হিসেবে মন্ত্র দিতে এবং সেখানে বাস করার প্রস্তাব করে। কিন্তু হরিহর সাথে
সাথেই তার প্রস্তাবে রাজি হয় না। কারণ সে নিজের এত হীন অবস্থা ও দীনতা প্রকাশ করতে
চায়নি।
গ. উদ্দীপকে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের হরিহরের
জীবনযাপনের দিকটি ফুটে উঠেছে
মানুষের জীবন সুখ-দুঃখের চারণক্ষেত্র। মানুষ
সেসব মেনে নিয়েই জীবনযাপন করে। নানা পেশা অবলম্বন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। সেই
স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় জাত-ধর্ম, সামাজিক নানা রীতিনীতি, সংস্কার, কুসংস্কার।
তারপরও প্রকৃতিসংলগ্ন মানুষের জীবনসংগ্রাম থেমে থাকে না।
উদ্দীপকে সামাজিক জীবনে পরস্পর নির্ভরশীল একদল
মানুষের জীবনসংগ্রামের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে গ্রামীণ জীবনে নানা পেশাজীবী মানুষের
কর্মপ্রচেষ্টা এবং তাদের স্ত্রীদের সংসার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে
উঠেছে। এই পরিশ্রমী মানুষদের শরীর আর মনোবল ছাড়া কিছু নেই। তারা কেউ বর্গাচাষি, কেউ
ভাড়া নায়ের মাঝি, কেউ কামলা। কোনোরকমে তাদের জীবন চলে।
উদ্দীপকের এসব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের হরিহরের পেশা ও জীবনযাপন সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ হরিহরও রায়বাড়িতে মাসিক
আট টাকা' বেতনে গোমস্তার কাজ করে। সেটিও এক ধরনের কামলা খাটা। সেই আয় দিয়ে হরিহরের
জীবন সুখে কাটে না। ছেলে-মেয়েকে নতুন জামা-কাপড়, ভালো খাবার দিতে পারে না। সংসার চলে
অতি কষ্টে
ঘ. উদ্দীপকটি 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের মূলভাবকে
আংশিক ধারণ করে। কারণ এতে শুধু দরিদ্র মানুষের জীবনযাপনের দিকটি ফুটে উঠেছে।
মানুষ জীবনব্যাপী নিজেকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ
খাইয়ে চলতে চেষ্টা করে। সে যেখানে থাকে, সেখানেই সে স্বপ্ন দেখে সুখের, শান্তির। সেই
স্বপ্ন পূরণে লড়াই করে নিজের সঙ্গে, পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে। চলার পথে সে পথ হারায়,
আশাহত হয়। স্বপ্নভঙ্গের হতাশা তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। তার পরও সে হাল ছাড়ে না,
জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যায়।
উদ্দীপকে কৃষক, শ্রমিক, মাঝি, দিনমজুর প্রভৃতি
পেশাজীবী মানুষের দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করার বিষয়টি তুলে ধরা
হয়েছে। এতে গ্রামীণ জীবনের একদল পেশাজীবী মানুষের
জীবনসংগ্রাম প্রতিফলিত হয়েছে। তারা অন্যের জমিতে চাষ করে, অন্যের নায়েও কামলা দেয় এবং
তাদের স্ত্রীরা নানা রকম শাকসবজি উৎপাদন করে, শাপলার ডাঁটা বাজারে বিক্রি করে কোনোরকমে
জীবন চালায়। এই বিষয়টি আলোচ্য গল্পের হরিহর এবং তার স্ত্রী সর্বজয়ার জীবনযাপনের সঙ্গে
সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ হরিহরও রায়বাড়িতে সামান্য বেতনে গোমস্তার কাজ করে সংসার চালায়।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পটি গ্রামীণ জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ
দুই ভাই-বোনের জীবনালেখ্য। এই দুই ভাই-বোন অপু ও দুর্গা। তাদের শৈশবের আনন্দ মানুষের
চিরায়ত শৈশবের আনন্দের প্রতীক। উদ্দীপকে এই বিষয়টি নেই। সেখানে গ্রামীণ জীবনের চিরায়ত
যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা কেবল 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের ঐ শিশু দুটির অভিভাবক হরিহর
ও তার স্ত্রী সর্বজয়ার জীবনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ কারণেই উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পের
মূলভাবকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি।
অতিরিক্ত
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর:
প্রশ্ন ১। মিসেস শাহানার দিন শুরু
হয় কাকডাকা ভোরে। ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দেওয়া, ছেলে-মেয়ের টিফিন তৈরি করা, তাদের বাবার
নাস্তা- এরপর নিজে তৈরি হয়ে অফিসে যাওয়া। তার মেয়ে সারা দশম শ্রেণিতে আর ছেলে সামি
অষ্টম শ্রেণিতে- তাদেরও কোনো ফুরসত নেই। স্কুল শেষে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, গণিত, আরো
কত কোচিং, বাড়ি ফিরে আবার স্কুলের কাজ, বাড়ির কাজ, কোচিং এর কাজ। স্কুল-কোচিং আর বাড়ির
চার দেয়াল এই যেন তাদের জীবন। বাবা-মা অফিস শেষে তাদের পছন্দের খাবার নিয়ে ফেরেন, নয়তো
নিজেরাই অনলাইনে অর্ডার দিয়ে পছন্দের খাবার আনিয়ে নেয়।
[রাজশাহী বোর্ড ২০২৪]
ক. অবহেলায় পড়ে থাকা অপুর কাঠের ঘোড়াটিকে কীসের
সাথে তুলনা করা হয়েছে?
খ. দশঘরার লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি
হয়নি কেন?
গ. উদ্দীপকের মিসেস শাহানার সাথে 'আম-আঁটির ভেঁপু'
গল্পের সর্বজয়ার সংসার জীবনের যে বৈসাদৃশ্য তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকের বক্তব্য 'আম-আঁটির ভেঁপু'
গল্পের মূল বক্তব্য থেকে অনেক দূরে।"- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা দেখাও।
১ নং
প্রশ্নের উত্তর
ক. অবহেলায় পড়ে থাকা অপুর কাঠের ঘোড়াটিকে পিঁজরাপোলের
আসামির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
খ. নিজের আর্থিক অসচ্ছলতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে
হরিহর দশঘরার লোকটির প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি।
গ. 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে হরিহর ব্রাহ্মণ পরিবারের
সন্তান হলেও দারিদ্র্যের কষাঘাতে তার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। গ্রামের অন্নদা
রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে যে অল্প কয়টা টাকা পায় তা দিয়ে তার সংসার, ঠিকঠাক চলে
না। চারদিকে তার দেনার বোঝা। এমন অবস্থায় দশঘরায় এক সদগোপ হরিহরকে তার এলাকায় ব্রাহ্মণ
হিসেবে মন্ত্র দিতে এবং সেই গ্রামে গিয়ে বাস করার প্রস্তাব দেয়। "কিন্তু হরিহর
সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি, কারণ এতে ব্রাহ্মণ হিসেবে তার আত্মসম্মানে বাধে
এবং লোকটি তার অসচ্ছল অবস্থা বুঝে যেত।
ঘ. উদ্দীপকের মিসেস শাহানার সঙ্গে 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার সংসার জীবনের বৈসাদৃশ্য রয়েছে তাদের আর্থিক অবস্থায়, তাদের
পরিবেশ-পরিস্থিতিতে, তাদের জীবনযাপনে। গ্রামবাংলার মানুষের জীবন অত্যন্ত সহজ-সরল। ফলে
জীবন সেখানে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ ও আনন্দময়। তা সত্ত্বেও দারিদ্র্য সেখানকার এক বড়ো সমস্যা।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে খেয়ে-না-খেয়ে সেখানে অনেকের জীবন অতিবাহিত হয়। উদ্দীপকের
মিসেস শাহানার দিন শুরু হয় কাক-ঢাকা ভোরে। ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দেওয়া, ছেলে-মেয়ের টিফিন
তৈরি করা, তাদের বাবার নাস্তা- এরপর নিজে তৈরি হয়ে অফিসে যাওয়া, এভাবেই চলে তার জীবন।
অন্যদিকে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার অভাবের সংসার। বাড়িটিও জীর্ণ ও ভাঙাচোরা।
ছেলে-মেয়ের মুখে সে ঠিকমতো খাবারও তুলে দিতে পারে না। সন্তানের পরনের ছেঁড়া কাপড় তার
অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করে। তার উপর ঋণের বোঝা তো আছেই। স্বামীর সামান্য বেতনে অনেক কষ্টে
সংসার চালাতে হয় তাকে। যা উদ্দীপকের মিসেস শাহানার জীবনের তুলনায় পুরোপুরি আলাদা।
"উদ্দীপকের বক্তব্য 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
মূল বক্তব্য থেকে অনেক দূরে।"- মন্তব্যটি যৌক্তিক।
স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষের জীবন ভিন্নতর হয়ে
থাকে। কেউ বড়ো হয় প্রকৃতির সান্নিধ্যে, আবার কেউ বড়ো হয় শহরের ইট-পাথরের চার দেয়ালের
মাঝে আবদ্ধ থেকে। এভাবেই কেউ সচ্ছল জীবন কাটায়, আবার কেউ অসচ্ছলতার মধ্যেই জীবন পার
করে দেয়।
উদ্দীপকে শহরের একটি আধুনিক জীবনের চিত্র ফুটিয়ে
তোলা হয়েছে। সেখানে বৃত্তাবদ্ধ এক একঘেয়ে জীবনের চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাদের জীবন
পুরোটাই যন্ত্রনির্ভর, অন্যদিকে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পটি প্রকৃতিনির্ভর। আর গ্রামীণ
সংসারের দুঃখ-দারিদ্র্যে ভরপুর। তাই উদ্দীপকে এই পরিস্থিতি বা বক্তব্য 'আম-আঁটির ভেঁপু'
গল্পের পরিস্থিতি বা মূল বক্তব্য থেকে ভিন্নতর।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পটি গ্রামবাংলার চিরায়ত
এক জীবন উপাখ্যান। সেখানে আর্থিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও জীবনকে উপভোগ করার বিষয়টি দৃশ্যমান।
শৈশবের দুরন্তপনা, বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, গ্রামীণ জীবনে দুটি ভাই-বোনের খুনসুটি,
হেসে-খেলে বেড়ানো, মায়ের শাসনে ভীত হয়েও তাকে ফাঁকি দিয়ে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠা, সর্বজয়ার
দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবন এবং জীবন নিয়ে আশাহত না হওয়ার দিকগুলো গল্পে ফুটে উঠেছে, যা
উদ্দীপকের বক্তব্য থেকে অনেক দূরে। তাই মন্তব্যটি যৌক্তিক।
প্রশ্ন ২। (i) আমরা ক'জন দুষ্টু
ছেলের দল,
গাছের তলায় গড়েছি মোদের আস্তানা। পাঠশালার শাসন-বারণ
ভেঙেছি মেলা,
বড় দীঘির পানিতে ভাসিয়েছি ভেলা।
(ii) নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, চাল আনতে ডাল, আদা
পেঁয়াজ আর ঝাল।
মাসের মধ্যেও কেনা হয়ে ওঠে না;
[কুমিল্লা বোর্ড ২০২৩]
ক. 'রোয়াক' কী?
খ. সর্বজয়ার কথা বন্ধ হবার উপক্রম হলো কেন? বুঝিয়ে
লেখ।
গ. উদ্দীপক (i)-এ 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের যে
চিত্র ধরা পড়েছে- তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক (ii)-কে ছাপিয়ে উদ্দীপক (i)-এর ভাবার্থ
যেন 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে প্রাধান্য বিস্তার করেছে- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. 'রোয়াক' হলো ঘরের সামনের খোলা জায়গা বা বারান্দা।
খ. স্বামী হরিহরের মুখে দশঘরার এক অবস্থাপন্ন
লোকের প্রস্তাব শুনে আগ্রহে স্ত্রী সর্বজয়ার কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার
কাজ করে এবং বিভিন্ন লোকের বাড়িতে পূজা করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিল। ব্রাহ্মণ হওয়ায়
দশঘরার এক অবস্থাপন্ন সদগোপ তাকে তাদের গ্রামে গিয়ে বাস করতে বলে। বসতবাড়ির পাশাপাশি
ধানের জমিও দিতে চায় তারা। হরিহর এই কথা স্ত্রী সর্বজয়াকে বললে আগ্রহের আতিশয্যে তার
কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
গ. উদ্দীপক (i)-এ 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের গ্রামীণ
জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ শিশুর আনন্দপূর্ণ শৈশবের চিত্র ধরা পড়েছে।
গ্রামীণ জীবনে প্রকৃতি তার রূপসুধা উন্মুক্ত
করে দেয় সবার জন্য। সেখানে সবাই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠার সুযোগ পায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
তবে এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে শিশুরা। তারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো প্রকৃতির কোলে
আনন্দিত জীবন কাটায়।
উদ্দীপক (i)-এর দুষ্টু ছেলেদের আনন্দিত জীবনের
কথা বলা হয়েছে। শাসন-বারণের বাঁধ ভেঙে, দিঘির জলে ভেলা ভাসিয়ে আনন্দে মেতেছে তারা।
এমনই এক আনন্দঘন জীবনের ছবি ভেসে উঠেছে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পটিতে। গল্পে গ্রামীণ জীবনে
প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। অপু ও দুর্গা প্রকৃতির
কোলে বেড়ে ওঠা দুই ভাই-বোন। তারা উভয়ে গ্রামীণ ফলফলাদি কুড়িয়ে, বনেবাদাড়ে ঘুরে বেরিয়ে
আনন্দপূর্ণ শৈশব কাটিয়েছে। এ চিত্রই উদ্দীপক (i)-এ ধরা পড়েছে।
ঘ. উদ্দীপক (ii)-কে ছাপিয়ে উদ্দীপক (i)-এর ভাবার্থ
যেন 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে প্রাধান্য বিস্তার করেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
পৃথিবীতে ধনী-দরিদ্র সব শ্রেণির মানুষ বসবাস
করে। সেক্ষেত্রে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সবার জীবনেই আসে। কেউ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে
থেকেও জীবনের আনন্দ খুঁজে পায়। দরিদ্রতাকে জয় করে সে পরম আনন্দে দিন কাটায়।
উদ্দীপক (i)-এ একদল প্রানচঞ্চল শিশুর আনন্দময়
জীবনের ছবি ভেসে উঠেছে। তারা বাধনহারার দল। সব বাধা পেরিয়ে তাদের জীবনে আনন্দ এসে ধরা
দিয়েছে যেন প্রকৃতির হাত ধরে। অন্যদিকে উদ্দীপক (ii)-এ জনৈক ব্যক্তির নুন আনতে পান্তা
ফুরায় অবস্থা। দরিদ্র জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে এখানে। এখানে আলোচ্য 'আনন্দিত জীবন' ও
'দরিদ্র জীবন' উভয়ই ফুটে উঠেছে 'আম-আঁটির ভেঁপু গল্পে। তবে উদ্দীপক (i) অংশটির মতো
আনন্দময় শৈশবটি অপু-দুর্গার জীবনে মুখ্য হয়ে উঠেছে।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে অপু ও দুর্গার আনন্দিত
জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের জীবনে দারিদ্র্যের কশাঘাত থাকলেও কখনই আনন্দ মিলিয়ে
যায়নি। প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়িয়ে, প্রকৃতির ফলফলাদি আহরণ করে প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ এই দুই শিশু
তাদের জীবনকে উপভোগ করেছে পরম আনন্দে। দারিদ্র্যকে ছাপিয়ে অপু ও দুর্গার আনন্দিত জীবনের
এই কাহিনিই প্রাধান্য পেয়েছে আলোচ্য গল্পে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন ৩। (i) নুন আনতে পান্তা
ফুরোয়, চাল আনতে ডাল, মাসের মধ্যেও কেনা হয়ে ওঠে না; আদা পেঁয়াজ আর ঝাল।
(ii) আমরা ক'জন দুষ্টু ছেলের দল, গাছের তলায়
গড়েছি মোদের আস্তানা। পাঠশালার শাসন বারণ ভেঙেছি মেলা, বড় দীঘির পানিতে ভাসিয়েছি ভেলা।
[চট্টগ্রাম বোর্ড ২০২৪]
ক. ভেরেন্ডাকচার বেড়া কী?
খ. "তুই তো একটা হাবা ছেলে"- এ কথা
বলার কারণ বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপক (i) এ 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের যে
চিত্র ধরা পড়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক (i) কে ছাপিয়ে উদ্দীপক (ii) এর মর্মার্থ
যেন 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে প্রাধান্য বিস্তার করেছে- মন্তব্যটি বিচার কর।
৩ নং
প্রশ্নের উত্তর
ক. ভেরেন্ডাকচার বেড়া হলো এরন্ড বা রেড়ি গাছের
বেড়া
খ. 'তুই তো একটা হাবা ছেলে' এ কথাটি স্নেহমিশ্রিত
তিরস্কারে সাবধান করার জন্য ছোট ভাই অপুকে দুর্গা বলে।
দুর্গা অন্য একজনের বাগান থেকে আমের কুসি বা
কচি আম কুড়িয়ে আনে। ভাই অপুকে সে লবণ আর তেল আনতে বলে। মেঝেতে তেল পড়লে মা গালাগালি
করবে। তাই সে অপুকে সতর্কতার সঙ্গে তেল ঢালতে বলে যেন ঘরের মেঝেতে না পড়ে। ভাইকে সতর্ক
থাকার জন্যই মূলত দুর্গা প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে।
গ. উদ্দীপক (i) এ 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের দারিদ্র্যের
চিত্রটি ধরা পড়েছে।
এ জগতে সবার অবস্থা এক রকম নয়। কেউ বসবাস করে
অর্থের প্রাচুর্যের মধ্যে, আবার কারও বসবাস চরম দরিদ্রতার মধ্যে। দরিদ্রতা হলো এমন
একটি অবস্থা যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাতে অক্ষম। দরিদ্র মানুষের প্রতিদিনের
জীবন কাটে দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে এমনই এক দরিদ্র পরিবারের
আখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত এক ব্রাহ্মণ পরিবারের প্রধান হরিহর।
তার সামান্য আয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দিনাতিপাত করা কষ্টসাধ্য। তাই তাদেরকে
ধার-দেনা করে চলতে হয়। হরিহরের ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় দরিদ্রতা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত
হয়। উদ্দীপক-(i) এ এমনই এক দরিদ্র পরিবারের শোচনীয় অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। দেখা যায়,
ওখানেও নুন আনতে পান্তা ফুরায়। চাল, ডাল, আদা, পেঁয়াজসহ নিত্য ব্যবহার্য কোনোকিছুই
তারা প্রয়োজন মতো কিনতে পারে না। তাই বলা যায়, উদ্দীপক-(i) এ 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
দরিদ্রতার চিত্রটি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে .
ঘ. উদ্দীপক (i) কে ছাপিয়ে উদ্দীপক (ii)-এর মর্মার্থ
যেন 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে প্রাধান্য বিস্তার করেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
শৈশব মানবজীবনের সবচেয়ে সুখের সময়। শৈশব মানেই
দুরন্তপনা, অনাবিল আনন্দ। এসময় কোনো পিছুটান থাকে না। পারিবারিক ঝঞ্ঝাট, দীনতা বা যেকোনো
সমস্যাই থাকুক না কেন, কোনোকিছুই শৈশবের দুরন্তপনাকে আটকে রাখতে পারে না।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে লেখক শৈশবের দুরন্তপনার
চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন অপু ও দুর্গা চরিত্রের মধ্য দিয়ে। ডানপিটে কিশোরী দুর্গা,
যার বয়স এগারো বছর। এই কিশোরী দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়িতে থাকে না। কার বাগানের আম গুটি
ধরেছে, কার বাগানের জাম পেকেছে এগুলো তার নখদর্পণে। সারা দিন বনে-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে
নানা কিছু সে সংগ্রহ করে তারপর সেগুলো ভাইয়ের সঙ্গে ভাগ করে খায়। শৈশবের দুরন্তপনার
এক চমৎকার আখ্যান রয়েছে এই গল্পে। এর পাশাপাশি পল্লি মায়ের শাশ্বত রূপ, দারিদ্র্যের
কশাঘাতে জর্জরিত পরিবার, প্রকৃতির বর্ণনা ইত্যাদি উঠে এসেছে এই গল্পে। তবে সবকিছুকে
ছাপিয়ে অপু-দুর্গার শৈশবের দুরন্তপনাই এই গল্পের প্রধান সুর হয়েছে।
উদ্দীপক (ii)-এও শৈশবের দুরন্তপনার চিত্র ফুটে
উঠেছে, যেখানে দেখা যায় কয়েকজন দুরন্ত ছেলের দল যারা গাছের তলায় আস্তানা গড়েছে। এ বিষয়টি
যেন দুর্গার প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর বিষয়কে নির্দেশ করছে, যা আলোচ্য গল্পের প্রধান
বিষয়। অপরদিকে উদ্দীপক (i)-এর চিত্র হরিহরের দারিদ্র্যকে নির্দেশ করে। তবে তা এই গল্পের
মূল হয়ে ওঠেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপক (i)-কে ছাপিয়ে উদ্দীপক (ii)-এর মর্মার্থ'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পে প্রাধান্য বিস্তার করেছে।
প্রশ্ন ৪। সিধু তার দরিদ্র পিতা-মাতার
একমাত্র সন্তান। সে ভীষণ ডানপিটে এবং দুরন্ত। সারাদিন গ্রামের ছেলেদের সাথে খেলাধুলা
করে এবং বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। প্রকৃতিই যেন তার একমাত্র আশ্রয়। কোন গাছের আম মিষ্টি,
কার বাগানের কলা পাকলো বলে- ইত্যাদি খবর তার চেয়ে কেউ ভালো জানে না। কারণ সে সারাদিন
এখানে-সেখানে ঘুরে ঘুরে এসব তথ্য সংগ্রহ করে। তার এমন কাজকর্মে গ্রামের সবাই অতিষ্ঠ।
অভিযোগ শুনতে শুনতে তার মায়ের কান ঝালাপালা হয়ে
গেছে। তাই তার মা সব সময় সিধুর কর্মকাণ্ডে ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন। [বরিশাল বোর্ড ২০২৪]
ক. হরিহর কার বাড়িতে কাজ করে?
খ. 'আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে
যাই।'-সর্বজয়ার এ কথার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সিধু চরিত্রের সাথে 'আম-আঁটির ভেঁপু'
গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. তুমি কী মনে কর উদ্দীপকের সিধুর মা 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার মতো পল্লিমায়ের শাশ্বত রূপ হতে পেরেছে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি
দাও।
৪ নং
প্রশ্নের উত্তর
ক. হরিহর গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে কাজ করে।
খ. 'আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে
যাই।'- সর্বজয়ার এ কথা বলার কারণ হলো দারিদ্র্য।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের এক দরিদ্র পরিবারের
বউ সর্বজয়া। স্বামী হরিহরের রোজগার খুবই কম। দুই সন্তান নিয়ে তাদের কোনো রকমে দিন পার
হয়। মাঝে মাঝে প্রচণ্ড অভাবের সময় তারা অন্যের কাছে ধার করে। কিন্তু সেই ধার আর শুধতে
পারে না। চারপাশ থেকে পাওনাদারেরা চাপ দিতে থাকে।
এমন অবস্থায় সর্বজয়া খুবই অসহায় বোধ করে। তাই
ক্ষোভে, অভিমানে সে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।
গ. উদ্দীপকের সিধু চরিত্রের সঙ্গে 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের দুর্গা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
শৈশবের আরেক নাম দুরন্তপনা। শৈশবে মানুষের জীবন
কাটে নানা ধরনের আনন্দ-উল্লাস, হইহুল্লোড়ে। বিশেষ করে যারা গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠে
তাদের জীবন আরও বেশি রঙিন হয়। সারা দিন ছোটাছুটি, ঘোরাঘুরি করে তারা শৈশবের দিন কাটায়।
'আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের দুরন্ত এক চরিত্র দুর্গা।
সে সব সময় প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ায়। বাড়িতে শুধু দুটো খাওয়ার সাথে তার সম্পর্ক। কোথায়
কার বাগানের আম কত বড় হলো, কার গাছের জাম পেকেছে ইত্যাদি খবর তার নখদর্পণে। এমন দুরন্তপনার
জন্য মা সর্বজয়া তার প্রতি ভীষণ বিরক্ত। উদ্দীপকের সিধুও এমনই দুরন্ত আর ডানপিটে। সারা
দিন সে ছেলেদের সাথে খেলাধূলা করে আর বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।
প্রকৃতিই যেন তার একমাত্র আশ্রয়। সিধুকে নিয়েও
তার মা উদ্বিগ্ন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সিধু চরিত্রের সঙ্গে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
দুর্গা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি উদ্দীপকের সিধুর মা 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার মতো পল্লিমায়ের শাশ্বত রূপ হতে পেরেছে।
মায়ের সঙ্গে সন্তানের থাকে নাড়ির টান। সন্তান
মায়ের কাছে যতটা প্রশ্রয়-আশ্রয় পায় ততটা আর কোথাও পায় না। মায়েরা সন্তানের শত শত দোষ
লুকিয়ে ভালোবাসেন। আবার কোনো সন্তান যদি বেশি বেপরোয়া হয়ে যায় তখন মা-ই তাকে শাসন
করেন। কাউকে কিছু বলতে দেন না।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের শাশ্বত এক মাতৃরূপ সর্বজয়া।
তার দুটি সন্তান: অপু ও দুর্গা। দুর্গা সারা দিন বাড়ির বাইরে বাইরে থাকে। বনে-জঙ্গলে
ঘুরে ঘুরে নানা ফল সংগ্রহ করে। মেয়ের এমন দূরন্তপনায় মা সর্বজয়া ভীষণ বিরক্ত। সন্তানদের
প্রতি তার ভালোবাসাও অগাধ। আবার শাসনের বেলায়ও কম যায় না। এমনই স্নেহ ও শাসনের সন্নিবেশে
সর্বজয়া হয়ে উঠেছে গ্রামীণ বাঙালি মায়ের শাশ্বত রূপ।
উদ্দীপকের সিধুর মায়ের মধ্যেও সর্বজয়ার রূপ পরিলক্ষিত
হয়। সিধুও দুর্গার মতো ডানপিটে ও দুরন্ত। সেও সারা দিন বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। তাকে
নিয়ে মায়ের কাছে নালিশের শেষ নেই। নালিশ শুনে সিধুর মায়ের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। তারপরও
সন্তানকে নিয়ে সে উদ্বিগ্ন থাকে। যার মধ্যে মাতৃত্বের রূপ প্রকাশ পেয়েছে। সবকিছুকে
ছাপিয়ে সিধুর মাও হয়ে উঠেছে বাঙালি মায়ের শাশ্বত রূপ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সিধুর
মা 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার মতো পল্লিমায়ের শাশ্বত রূপ হতে পেরেছে।
প্রশ্ন ৫। গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে
ওঠা সবুজ ও সাকিল সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোনে মেতে থাকে। তাছাড়া টেলিভিশনে খেলা দেখাও
তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ঘর থেকে তারা বেরুতেই চায় না। তাদের মা বিলকিস বেগম ছেলেদের
ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। কখনো আদর করে, কখনোবা রাগ
করে মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে তাদের দূরে রাখার
চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, "মোবাইল দরকার কিন্তু লেখাপড়া সবার আগে দরকার, বাবা।"
[দিনাজপুর বোর্ড ২০২৪]
ক. নীলমণি রায় কে?
খ. সর্বজয়ার কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো কেন?
বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সবুজ ও সাকিলের সাথে 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের অপু-দুর্গার বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকের বিলকিস বেগম যেন 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার যথার্থ প্রতিনিধি।" মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৫ নং
প্রশ্নের উত্তর
ক. নীলমণি রায় হরিহর রায়ের জ্ঞাতি-ভ্রাতা।
খ. স্বামী হরিহরের মুখে দশঘরার এক অবস্থাপন্ন
লোকের
প্রস্তাব শুনে আগ্রহে স্ত্রী সর্বজয়ার কথা বন্ধ
হওয়ার উপক্রম হলো।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার
কাজ করে এবং বিভিন্ন লোকের বাড়িতে পূজা করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিল। ব্রাহ্মণ হওয়ায়
দশঘরার এক অবস্থাপন্ন সদগোপ তাকে তাদের গ্রামে গিয়ে বাস করতে বলে। বসতবাড়ির পাশাপাশি
ধানের জমিও দিতে চায় তারা। হরিহর এই কথা স্ত্রী সর্বজয়াকে বললে আগ্রহের আতিশয্যে তার
কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
গ. উদ্দীপকের সবুজ ও সাকিলের সাথে 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের অপু-দুর্গার চঞ্চলতার দিক থেকে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
আগেকার দিনে গ্রামীণ জীবনে শিশুরা প্রকৃতির সঙ্গে
মিশে গিয়ে খেলাধূলা ও খুনসুটিতে মেতে উঠত। তাদের জীবন ছিল প্রকৃতিঘনিষ্ঠ ও আনন্দময়।
কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির সংস্পর্শে এসে শিশুরা ঘরে বসে থেকে বিভিন্ন খেলা খেলে।
উদ্দীপকে গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা সবুজ ও সাকিল
সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোনে মেতে থাকে। তাছাড়া টেলিভিশনে খেলা দেখাও তাদের অভ্যাসে পরিণত
হয়েছে। অন্যদিকে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের অপু ও দুর্গা দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও প্রকৃতির
সঙ্গে হেসে খেলে বড় হয়েছে। সারা দিন তারা বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। অন্যের গাছ থেকে আম
কুড়িয়ে এনে মায়ের দৃষ্টির আড়ালে নুন ও তেল দিয়ে মেখে খায়। অর্থাৎ অপু ও দুর্গার মধ্যে
চঞ্চলতা লক্ষ করা যায়, যা উদ্দীপকের সবুজ ও সাকিলের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. "উদ্দীপকের বিলকিস বেগম যেন 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার যথার্থ প্রতিনিধি।"- মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষের জীবনে শৈশব একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ
সময়টিতে সবার মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায়। এ সময়ে শিশুরা আনন্দ ও দুরন্তপনায়
মেতে থাকে। ফলে দুষ্টুমি ও অবাধ্যতার জন্য কখনো কখনো বাবা-মা তাদেরকে নিয়ে চিন্তিত
হয়ে পড়েন।
উদ্দীপকের বিলকিস বেগম তার ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে
চিন্তিত। কখনো আদর করে, কখনোবা রাগ করে মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে তাদের দূরে রাখার
জন্য চেষ্টা করেন। 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার মধ্যেও অপু ও দুর্গাকে নিয়ে একইভাবে
চিন্তিত হতে দেখি। এদিক থেকে বিলকিস
বেগম সর্বজয়ার যথার্থ প্রতিনিধি।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে সর্বজয়ার ছেলে অপু এবং
মেয়ে দুর্গা সুযোগ পেলেই বাড়ির বাইরে বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে দুর্গা মায়ের
কোনো কথাই শোনে না। সে তার নিজের খেয়াল খুশি মতো চলে। অন্যের গাছের আম কুড়িয়ে খায়।
ছোট ভাই অপুর সঙ্গে খুনসুটি করে। মাকে সে কোনো কাজেই সহযোগিতা করে না। পরিবারের প্রতি
তার কোনো দায়িত্ববোধই নেই। এগুলো দেখে সর্বজয়া খুবই চিন্তিত হয়। দুর্গাকে বকা-ঝকা করে।
স্বামী হরিহরের কাছে সে মেয়ের ব্যাপারে নালিশ জানায়। ফলে তার মধ্যে সন্তানদের নিয়ে
দুশ্চিন্তা কাজ করে, যা উদ্দীপকের বিলকিস বেগমের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়,
প্রদত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রাকটিস
প্রশ্ন ১। পুতুলের মা খুকি আজ
ভয়ানক ব্যস্ত। আজ কিনা ছোট্ট পুতুলের জন্মদিন, তাই খুব খাওয়ার ধুম লেগেছে। ছোট্ট টেবিলের
উপর ছোট্ট ছোট্ট থালা-বাটি সাজিয়ে তার মধ্যে কী চমৎকার করে খাবার তৈরি করে রাখা হয়েছে।
আর চারিদিকে সত্যিকারের ছোট্ট ছোট্ট চেয়ার সাজানো রয়েছে, পুতুলেরা বসে খাবে বলে। [বরিশাল
বোর্ড ২০২২]
ক. কালমেঘ কী?
খ. 'আমার কাপড় যে বাসি'- অপু এ কথা কেন বলেছিল?
গ. উদ্দীপকের সাথে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ
দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উক্ত সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার ঘর ছেড়ে একদিকে বেরিয়ে যেতে চাওয়ার কারণ নয়"-মূল্যায়ন
কর।
প্রশ্ন ২। সালেহা কোমের একমাত্র
সন্তান রহিম ভীষণ চঞ্চল। সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ানোই তার কাজ। সে কখনও নদীর তীরে, কখনও বনে-বাদাড়ে
ঘুরে বেড়ায়। কোন বাগানে বরই পেকেছে, কাঁঠাল পেকেছে, কোন গাছের আম মিষ্টি- এসব খবর রহিমের
চেয়ে কেউ ভালো জানে না। তার মা সালেহা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। শত
কষ্ট করেও পঙ্গু স্বামী ও সন্তানদের মুখে দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোটাতে হিমশিম খেতে
হয় তাকে। যা নিয়ে সে সব সময় উদ্বিগ্ন ও ব্যস্ত থাকে। [কুমিল্লা বোর্ড ২০২২]
ক. গরাদ কী?
খ. 'হাবা একটা কোথাকার- যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে!'-কথাটি
বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে রহিমের আচরণে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
যে দিকটির ছায়াপাত ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকের সালেহা বেগম ও 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের সর্বজয়ার উদ্বিগ্নতার স্বরূপ একই।"- বিশ্লেষণ কর।
প্রশ্ন ৩। ভয় নেই ঘৃণা নেই ওর
দেহটাতে কোলাব্যাঙ তুলে ধরে খপ করে বাগানে আছে খোঁটা পোঁতার এক গর্ত তার মধ্যে সেটা
পোষে-পোকা-মাকড় দেয় খেতে। গুবরে পোকা কাগজের বাক্সোয় এনে রাখে খেতে দেয় গোবরের গুটি
কেউ ফেলে দিতে গেলে অনর্থ বাঁধে ইস্কুলে যায় পকেটে নিয়ে কাঠবিড়ালী [যশোর বোর্ড ২০২২]
ক. হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম কী?
খ. "আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা"-
বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের ছেলেটার সাথে 'আম-আঁটির ভেঁপু'
গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকে বর্ণিত ভাববস্তু শিশু-কিশোর
মনের আনন্দেরই বহিঃপ্রকাশ।" মন্তব্যটি 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ
কর।
প্রশ্ন ৪। রাহী ও রিহা দুই ভাই-বোন।
সারাদিন ভিডিও গেম আর ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। তাদের মা অতিকষ্টে সংসার সামলান। সারাদিন
কাজ করতে করতে মা ক্লান্ত। তারপর আছে তাদের পছন্দের খাবার তৈরির বায়না। বাবার আয়ও সীমিত।
কিন্তু রিহা রাহীর তাতে কিছুই আসে যায় না। আপন ভুবন নিয়েই ওরা ব্যস্ত। মা বিরক্ত হলেও
ভাই-বোন ওদের মতো। [বরিশাল বোর্ড ২০২৩]
ক. "রোসো রোসো একটুখানি হাঁফ জিরোতে দাও।”- উক্তিটি কার?
খ. হরিহর রায়ের বাড়ির অবস্থা কেমন?
গ. উদ্দীপকের রিহার সাথে 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের
সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রের তুলনা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের চরিত্রদ্বয়ের
আপন ভুবন 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের বক্তব্যকে ধারণ করে কি?- মতামত দাও।
প্রশ্ন ৫। জীবিকার তাগিদে তিনু
আর আরাফের মা সেই ভোরবেলায় বেরিয়ে যায়। কয়েক বাসায় কাজ করে তবেই বাড়ি ফেরে। তিনবেলা
খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে। এদিকে বোনকে নিয়ে আরাফ সারাদিন মাঠে-ঘাটে,
বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। নাওয়া-খাওয়ার কোনো খবর নেই। কখনো নদীর ধারে কাশবনে হারিয়ে যাওয়া।
কখনো বা খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়ানো তাদের কাজ। বাড়ি ফিরেও মলিন বিছানায় শুয়ে ভাই-বোনের সারাদিন
ঘুরে বেড়ানোর গল্পই চলে সারাক্ষণ। [কুমিল্লা বোর্ড ২০২৩]
ক. দুর্গা নিরীহমুখে বাড়ির মধ্যে ঢুকল কেন?
খ. "তোমার তো আবার গল্প করে বেড়ানো স্বভাব।"-
এ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের ১ম অংশের সাথে 'আম-আঁটির ভেঁপু
গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ২য় অংশে প্রতিফলিত দিকটিই 'আম-আঁটির
ভেঁপু' গল্পের উপজীব্য বিষয়। বিশ্লেষণ কর।
জ্ঞানমূলক
১। অবহেলায় পড়ে থাকা অপুর কাঠের ঘোড়াটিকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
[রা. বো. '২৪]
উত্তর: অবহেলায় পড়ে থাকা অপুর কাঠের ঘোড়াটিকে পিঁজরাপোলের আসামির সঙ্গে তুলনা করা
হয়েছে।
২। 'রোয়াক' কী? [কু. বো. '২৪]
উত্তর: 'রোয়াক' হলো ঘরের সামনের খোলা জায়গা বা বারান্দা।
৩। ভেরেন্ডাকচার বেড়া কী? [চ. বো. '২৪]
উত্তর: ভেরেন্ডাকচার বেড়া হলো এরন্ড বা রেড়ি গাছের বেড়া।
৪। হরিহর কার বাড়িতে কাজ করে? [ব. বো. '২৪]
উত্তর: হরিহর গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে কাজ করে।
৫। নীলমণি রায় কে? [দি. বো. '২৪]
উত্তর: নীলমণি রায় হরিহর রায়ের জ্ঞাতি-ভ্রাতা।
৬। দুর্গা নিরীহমুখে বাড়ির মধ্যে ঢুকল কেন? [কু. বো. '২৩]
উত্তর: দুর্গা মায়ের ডাক শুনে নিরীহমুখে বাড়ির মধ্যে ঢুকল।
৭। "রোসো রোসো একটুখানি হাঁফ জিরোতে দাও।"- উক্তিটি কার? [ব.
বো. '২৩]
উত্তর: "রোসো রোসো একটুখানি হাঁফ জিরোতে দাও।"-উক্তিটি সর্বজয়ার।
৮। হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম কী? [য. বো. '২২]
উত্তর: হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম নীলমণি রায়।
৯। কালমেঘ কী? [ব. বো. '২২]
উত্তর: কালমেঘ হলো যকৃতের রোগের উপকারী এক প্রকার তিক্ত স্বাদের গাছ।
১০। উঠানের কোন জায়গা থেকে দুর্গা অপুকে ডাকছিল?
উত্তর: উঠানের কাঁঠালতলা থেকে দুর্গা অপুকে ডাকছিল।
১১। 'পিঁজরাপোলের আসামি' কী? [সিলেট ক্যাডেট কলেজ]
উত্তর: পিজরাপোলের আসামি হলো- খাঁচায় পড়ে থাকা অবহেলিত আসামি।
১২। হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম কী? [রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা]
উত্তর: হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম নীলমণি রায়।
অনুধাবনমূলক প্রশ্
প্রশ্ন ১। দশঘরার লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি কেন? [রা.
বো, '২৪]
উত্তর: নিজের আর্থিক অসচ্ছলতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে হরিহর দশঘরার লোকটির
প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে হরিহর ব্রাহ্মণ পরিবারের
সন্তান হলেও দারিদ্র্যের কষাঘাতে তার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। গ্রামের অন্নদা
রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে যে অল্প কয়টা টাকা পায় তা দিয়ে তার সংসার ঠিকঠাক চলে
না। চারদিকে তার দেনার বোঝা। এমন অবস্থায় দশঘরার এক সদগোপ হরিহরকে তার এলাকায় ব্রাহ্মণ
হিসেবে মন্ত্র দিতে এবং সেই গ্রামে গিয়ে বাস করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হরিহর সঙ্গে
সঙ্গে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি, কারণ এতে 'ব্রাহ্মণ হিসেবে তার আত্মসম্মানে বাধে এবং
লোকটি তার অসচ্ছল অবস্থা বুঝে যেত। এ ছাড়া পাওনাদাররাও 'তাদের টাকা-পয়সা চেয়ে বসবে,
না পেলে যেতে দেবে না।
প্রশ্ন ২। সর্বজয়ার কথা বন্ধ হবার উপক্রম হলো কেন? বুঝিয়ে উত্তর: হরিহর
রায়ের বাড়ির অবস্থা অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ। লেখ। [কু. বো. '২৪; দি. বো. '২৪]
উত্তর: স্বামী হরিহরের মুখে দশঘরার এক অবস্থাপন্ন লোকের প্রস্তাব শুনে
আগ্রহে স্ত্রী সর্বজয়ার কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের হরিহর রায়বাড়িতে গোমস্তার
কাজ করে এবং বিভিন্ন লোকের বাড়িতে পূজা করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিল। ব্রাহ্মণ হওয়ায়
দশঘরার এক অবস্থাপন্ন সদগোপ তাকে তাদের গ্রামে গিয়ে বাস করতে বলে। বসতবাড়ির পাশাপাশি
ধানের জমিও দিতে চায় তারা। হরিহর এই কথা স্ত্রী সর্বজয়াকে বললে আগ্রহের আতিশয্যে তার
কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
প্রশ্ন ৩। "তুই তো একটা হাবা ছেলে"- এ কথা বলার কারণ বুঝিয়ে
লেখ। [চ. বো. '২৪]
উত্তর: তুই তো একটা হাবা ছেলে' এ কথাটি স্নেহমিশ্রিত তিরস্কারে সাবধান করার জন্য ছোট
ভাই অপুকে দুর্গা বলে।
দুর্গা অন্য একজনের বাগান থেকে আমের কুসি বা
কচি আম কুড়িয়ে আনে। ভাই অপুকে সে লবণ আর তেল আনতে বলে। মেঝেতে তেল পড়লে মা গালাগালি
করবে। তাই সে অপুকে সতর্কতার সঙ্গে তেল ঢালতে বলে যেন ঘরের মেঝেতে না পড়ে। ভাইকে সতর্ক
থাকার জন্যই মূলত দুর্গা প্রশ্নোক্ত কথাটি বলে।
প্রশ্ন ৪। "আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই।"-
সর্বজয়ার এ কথার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর। [ব. বো. '২৪]
উত্তর: 'আমার এমন হয়েছে যে ইচ্ছে করে একদিকে বেরিয়ে যাই।'- সর্বজয়ার
এ কথার কারণ হলো দারিদ্র্য। 'আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পের এক দরিদ্র পরিবারের বউ সর্বজয়া।
স্বামী হরিহরের রোজগার খুবই কম। দুই সন্তান নিয়ে তাদের কোনো রকমে দিন পার হয়। মাঝে
মাঝে প্রচণ্ড অভাবের সময় তারা অন্যের কাছে ধার করে। কিন্তু সেই ধার আর শুধতে পারে না।
চারপাশ থেকে পাওনাদারেরা চাপ দিতে থাকে। এমন অবস্থায় সর্বজয়া খুবই অসহায় বোধ করে। তাই
ক্ষোভে, অভিমানে সে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।
প্রশ্ন ৫। হরিহর রায়ের বাড়ির অবস্থা কেমন? [ব. বো. '২৩]
উত্তর: হরিহর রায়ের বাড়ির অবস্থা অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ।
হরিহর দুর্গা ও অপুর বাবা। সে গ্রামের অন্নদা
রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে। মাসিক বেতন আট টাকা, তাও নিয়মিত পায় না। ফলে হরিহরের
বাড়িটি দীর্ঘদিন মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বাড়িটির সামনের দিকের রোয়াক ভাঙা, দেয়ালের
ফাটলে আগাছা বাসা বেঁধেছে। দরজা-জানালার কপাট একদমই ভেঙে গেছে। সেগুলো নারিকেলের দড়ি
দিয়ে গরাদের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬। "তোমার তো আবার গল্প করে বেড়ানো স্বভাব।"- এ কথাটি
বুঝিয়ে লেখ। [কু. বো. '২৩]
উত্তর: "তোমার তো আবার গল্প করে বেড়ানো স্বভাব।"- এ কথাটি হরিহর তার স্ত্রী
সর্বজয়াকে বলেছিল।
আম-আঁটির ভেঁপু' গল্পে দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিহর
রায়বাড়িতে মাসিক আট টাকা বেতনে চাকরি করে সংসার চালায়। অভাবের কারণে ছেলে-মেয়ে অপু-দুর্গার
ঠিকমতো যত্ন নিয়ে পারে না। সংসার চালাতে গিয়ে সর্বজয়া চেনা-পরিচিতদের কাছ থেকে ধার-দেনা
করে। ঋণ শোধ দিতে না পারায় কথা শোনে। এমন টানাপড়েনের সংসারে হরিহর সদগোপদের মন্ত্র
দেওয়ার প্রস্তাব পায়। হরিহর সঙ্গে সঙ্গে রাজি না হয়ে, ঘরে ফিরে স্ত্রী সর্বজয়ার সঙ্গে
এ বিষয়ে পরামর্শ করে। সর্বজয়াকে স্বভাববৈশিষ্ট্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হরিহর প্রশ্নোক্ত
কথাটি বলে। কারণ যারা মন্ত্র চেয়েছে তারা জাতে সদগোপ।
.png)
Social Plugin