জীবন বিনিময়
গোলাম মোস্তফা
জ্ঞানমূলক
প্রশ্ন ও উত্তর
০১। বাদশা বাবরের পুত্রের নাম কী?
উত্তর: হুমায়ুন।
০২। বাবর ব্যগ্রকণ্ঠে কাদের ডেকেছিল?
উত্তর: ভিষকবৃন্দকে।
০৩। বাবর কার কাছ থেকে পুত্রকে বাঁচাবার শেষ
পরামর্শটি পেয়েছিলেন?
উত্তর: দরবেশ।
০৪। গোলাম মোস্তফা জন্মগ্রহণ করেন কোন গ্রামে?
উত্তর: মনোহরপুর গ্রামে।
০৫। জীবন বিনিময় কবিতাটি কোন কাব্য থেকে সংকলিত
হয়েছে?
উত্তর: বুলবুলিস্তান।
০৬। শেলসম শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: তীক্ষ্ণ অস্ত্রের মত।
০৭। জীবন বিনিময় কবিতায় কার কাছে মরণের পরাজয়
ঘটেছে?
উত্তর: পিতৃস্নেহের কাছে।
০৮। জীবন বিনিময় কবিতায় গৃহতলের পরিবেশ কেমন
ছিল?
উত্তর: স্তব্ধ-নীরব।
০৯। সম্রাট বাবর কী কোরবানি দিতে প্রস্তুত?
উত্তর: নিজের প্রাণ।
১০। বাদশা বাবর আল্লাহর কাছে কী ভিক্ষা করেছেন?
উত্তর: পুত্রের জীবন।
অনুধাবনমূলক
প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর
০১। "সেবাযত্নের বিধিবিধানের ত্রুটি নাহি
এক লেশ”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: হুমায়ুনের সুস্থতা নিশ্চিতে রাজ্যের
সকল চিকিৎসকের চেষ্টার কোনো ত্রুটি না থাকার বিষয়টি চরণটির আলোচ্য
বিষয়।
বাবরপুত্র হুমায়ুন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত।
বাদশা বাবর রাজ্যের যত হাকিম, কবিরাজ ও দরবেশ আছে সকলকে এনে পুত্রের বিশেষ চিকিৎসার
ব্যবস্থা করেন। তারাও তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন যথাযথ সেবা করে হুমায়ূনকে সুস্থ
করার জন্যে।
০২। রাজ্যের চিকিৎসকেরা নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো
কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাদশা বাবরকে হুমায়ুনের বাঁচার কোনো
আশা দিতে না পেরে রাজ্যের চিকিৎসকেরা নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো।
রাজ্যের সকল চিকিৎসক তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন
হুমায়ূনকে সুস্থ করে তুলতে। বাদশা যখন তাদের ডেকে এনে পুত্রের রোগমুক্তি হবে কি না
জিজ্ঞেস করেন তখন সকলেই নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকেন। কারণ তাদের কাছে কোনো উত্তর ছিলনা।
তারা হুমায়ুনের জীবন ফিরে পাওয়ার কোনো আশা দেখেননি। এই নিষ্ঠুর সত্যটি তারা বলতে পারছিলেন
না বলেই নতমস্তকে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
০৩। বাদশা বাবর কার কাছ থেকে সবশেষ পরামর্শটি
পেয়েছিলেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাদশা বাবর দরবেশের কাছ থেকে সবশেষ পরামর্শটি
পেয়েছিলেন।
রাজ্যের কেউ যখন হুমায়ুনের জীবন বাঁচানোর কোনো
পথ দেখাতে পারছিলোনা তেমন সময় একজন দরবেশ বলেন বাদশা বাবর যদি নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি
দান করেন তাহলে আল্লাহ তাকে তার পুত্রের প্রাণ ফিরিয়ে দিবেন। এই পরামর্শ গ্রহণ করেই
বাদশা বাবর তাঁর পুত্রের প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন।
০৪। জীবন বিনিময় কবিতায় 'সর্বশ্রেষ্ঠ ধন' বলতে
কী বুঝানো হয়েছে?-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: জীবন বিনিময় কবিতায় সর্বশ্রেষ্ঠ ধন বলতে
নিজের জীবনকে বোঝানো হয়েছে।
দরবেশ বাদশাকে বলেন, তিনি যদি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ
ধনটি দান
করেন তাহলে আল্লাহ তার ছেলের প্রাণ ফিরিয়ে দেবেন।
তিনি ভেবে দেখলেন তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁর নিজের জীবন। তাই তিনি নিজের প্রাণকে
সর্বশ্রেষ্ঠ ধন হিসেবে দান করতে চেয়েছেন।
০৫। "আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কি
কানাকানি"-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আকাশে বাতাসে ধ্বনিতেছে যেন গোপন কি
কানাকানি বলতে হুমায়ুনের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনার কথা বোঝানো হয়েছে।
ছেলের আরোগ্য লাভের জন্য বাদশা বাবর একান্তে
স্তব্ধ পরিবেশে গভীর ধ্যানে বসেছিলেন। প্রার্থনায় বসে দু হাত তুলে তিনি পুত্রের জীবন
ভিক্ষা চেয়েছিলেন। এমন সময় তাঁর অন্তরে আধ্যাত্মিক এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় যা থেকে তিনি
পুত্রের আরোগ্য লাভের প্রার্থনা কবুল হওয়ার ইশারা পান। যা উক্ত চরণটিতে ব্যক্ত হয়েছে।
০৬। "তিমির রাতের তোরণে তোরণে উষার পূর্বাভাস"-বলতে
কী বোঝানো হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য চরণটি দ্বারা হুমায়ুনের রোগ-মুক্তির
বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।
ভোরের আগমন আঁধার রাতের অবসান ঘোষণা করে। এখানে
হুমায়ুনের মুমূর্ষু অবস্থাকে তিমির রাত এবং রোগ-মুক্তির লক্ষণকে উষার পূর্বাভাস বলা
হয়েছে। বাবরের প্রার্থনা কবুল হওয়ার পর তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন কখন তাঁর সন্তান সুস্থ
হবে। এই আশাকে তিনি আলোচ্য চরণটির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন.
০৭। বাবর মরেও অমর হয়েছে কীভাবে?-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সন্তানের জন্য আত্মত্যাগের মহান নিদর্শন
স্থাপন করে বাবর মরেও অমর হয়েছেন।
সন্তানের জীবন ফিরে পেতে সম্রাট বাবর আল্লাহর
কাছে নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ অবলম্বন, নিজের প্রাণ দান করতে চান। এর বিনিময়ে তিনি তাঁর ছেলের
জীবন ফিরে পান। কিন্তু নিজে মৃত্যুকে বরণ করে নেন। কিন্তু এই মৃত্যু তাঁকে মহান করেছে,
অমর করেছে। পিতৃস্নেহের কাছে মরণের পরাজয় ঘটিয়েছে।
০৮। "পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়"-ব্যাখ্যা
কর।
উত্তর: আলোচ্য চরণটি দ্বারা সন্তানের প্রতি
পিতার ভালোবাসার শক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
বাদশাজাদা হুমায়ুন যখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত
তখন তারে সুস্থ করে তুলতে এমন কোনো পন্থা বাকি নেই যা অবলম্বন করেননি। শেষে নিজের জীবনের
বিনিময়ে তিনি প্রভুর কাছ থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন। মৃত্যু তাঁর ভেতরে স্থান নিতে পারেনি।
নিজের জীবন দান করে তিনি তার ছেলের মৃত্যুকে পরাজিত করেছিলেন। বাবরের মৃত্যু তাকে বিস্তৃত
করতে পারেনি। পিতৃস্নেহ তাকে আমাদের কাছে অমর করে রেখেছে। তাই এখানে বলা হয়েছে পিতৃস্নেহের
কাছে মরণের পরাজয় ঘটেছে।
সৃজনশীল
০১। বাবার সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে এসে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে
উৎপল ও তার বাবা। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা উৎপলকে আঘাত করতে এলে বাবা তাকে সরিয়ে দিয়ে
নিজে ছিনতাইকারীর ছুরিতে রক্তাক্ত হন। হাসপাতালে ডাক্তার সাহেব যখন উৎপলকে জানান যে,
এই মুহূর্তে রক্ত না হলে রোগী বাঁচানো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে উৎপল তার শরীর থেকে প্রয়োজনীয়
রক্ত দিয়ে বাবাকে আশঙ্কামুক্ত করেন।
ক. 'জীবন বিনিময়' কবিতায় কোনটিকে 'সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ
ধন' বলা হয়েছে?
খ. কবি 'জীবন বিনিময়' কবিতায় নীরবতাকে নিষ্ঠুর
বলেছেন কেন?
গ. উৎপলকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে উদ্দীপকের
পিতার মাঝে 'জীবন বিনিময়' কবিতার বাদশা বাবরের যে পরিচয় মেলে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "ভাবগত ঐক্য থাকলেও উদ্দীপকটি 'জীবন
বিনিময়' কবিতার ঘটনাপ্রবাহের সমার্থক নয়" মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের
উত্তর:
ক. 'জীবন বিনিময়' কবিতায় সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ধন বলা
হয়েছে নিজের প্রাণকে।
*নোট: প্রশ্নটি জ্ঞানমূলক। মূল কবিতা অনুসারে
সঠিক তথ্যটি লিখতে হবে।*
খ. কবি জীবন বিনিময় কবিতায় নীরবতাকে নিষ্ঠুর
বলেছেন কারণ চিকিৎসকগণের নীরবতার মানেই ছিল হুমায়ুনের জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া।
বাবরপুত্র হুমায়ূনকে সুস্থ করতে রাজ্যের চিকিৎসকগণ
চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তাঁরা কোনো আশার আলো খুঁজে পাননি।
বাবর যখন তাঁদেরকে ডেকে পুত্রের অবস্থা জানতে চাইলেন তখন তাঁরা সকলে নীরব ছিলেন। তাঁদের
নীরবতার মানেই হলো হুমায়ুনের বাঁচার কোনো আশা নেই। এই নীরবতা অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে
বাবরের বুকে অস্ত্রের মত বিদ্ধ হয়।
গ. উৎপলকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে উদ্দীপকের
পিতার মাঝে 'জীবন বিনিময়' কবিতার বাদশা বাবরের যে পরিচয় মেলে তা হলো সন্তান-বাৎসল্যতা
তথা সন্তানের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।
উদ্দীপকে উৎপল ঢাকায় বেড়াতে এসে ছিনতাইকারীর
কবলে পড়ে। ছিনতাইকারীরা উৎপল কে আঘাত করতে আসলে তার বাবা তাকে সরিয়ে দিয়ে ছিনতাইকারীর
ছুরিতে রক্তাক্ত হন। উৎপলের পিতা নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। তাই
নিজে রক্তাক্ত হয়ে সন্তানকে বাঁচিয়েছেন। 'জীবন বিনিময়' কবিতায় সম্রাট বাবরের পুত্র
হুমায়ুন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল। কোনোভাবেই তার সুস্থতার কোনো লক্ষণ ছিলনা। তখন
এক দরবেশের পরামর্শে বাবর তা কাছে। সে প্রার্থনা কবুল হলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং
হুমায়ুন সুস্থ হয়ে যায়। এখানে সন্তানের প্রতি পিতার অপরিসীম ভালোবাসা এবং অনুভূতি
প্রকাশ পেয়েছে। যা উদ্দীপকেও উপস্থিত।
ঘ. 'ভাবগত ঐক্য থাকলেও উদ্দীপকটি 'জীবন বিনিময়'
কবিতার ঘটনা প্রবাহের সমার্থক নয়"-মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকে পিতা-পুত্রের গভীর মেলবন্ধন প্রকাশিত
হয়েছে। পুত্রের জন্য পিতার আত্মত্যাগ এবং পিতার জন্যে পুত্রের আত্মত্যাগ উদ্দীপকে প্রকাশ
পেলেও 'জীবন বিনিময়' কবিতার ঘটনাপ্রবাহে তা অনুপস্থিত।
উৎপল এবং তার বাবা ঢাকায় বেড়াতে এসে ছিনতাইকারীর
কবলে পড়ে। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা উৎপলকে আঘাত করতে আসলে তার বাবা ছিনতাইকারীর ছুরিতে
রক্তাক্ত হন। ডাক্তার সাহেব যখন উৎপলকে জানান যে এই মুহূর্তে রক্ত না হলে রোগীকে বাঁচানো
যাবে না তখন সাথে সাথে উৎপল তার শরীর থেকে রক্ত দিয়ে বাবাকে আশঙ্কামুক্ত করেন। এখানে
পিতা ও পুত্র উভয়েই উভয়ের স্থান থেকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে।
জীবন বিনিময় কবিতায় বাদশা বাবর তাঁর পুত্রের
অসুস্থতায় অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। যেকোনো মূল্যেই তিনি তাঁর পুত্রের জীবন ফেরত পেতে চান।
এক দরবেশের পরামর্শে তিনি তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনকে উৎসর্গ করে অর্থাৎ নিজের প্রাণের
বিনিময়ে পুত্রের প্রাণ ফেরত চেয়েছেন। এখানে সন্তানের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও অনুভূতি
প্রকাশ পেয়েছে। বিপরীতে পুত্র হুমায়ুনের কোনো অবদান দৃষ্টিগোচর হয়নি। কবিতায় পিতার
মৃত্যু হলেও উদ্দীপকে কারোরই মৃত্যু হয়নি। তাই বলা যায় যে, আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।
অতিরিক্ত
সৃজনশীল প্রশ্ন:
০১। আশুতোষ সবসময় নেশার জগতে ডুবে থাকে। সংসারের প্রতি
তার উদাসীনতা ছিল চরম। তার ছেলে আশিক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও ডাক্তার বলেছিলেন
সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব। অসুস্থ আশিক দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে
পড়ছিল, কিন্তু তার যত্ন নেওয়ার কেউ ছিল না। পিতার অমনোযোগী আচরণে ছেলেটি চুপচাপ মৃত্যুর
দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। একদিন সেই অবহেলার চূড়ান্ত পরিণতিতে ছেলেটি পৃথিবী থেকে বিদায়
নিল।
গ. উদ্দীপকের আশুতোষের সাথে 'জীবন বিনিময়' কবিতার
বাদশা বাবরের বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আশুতোষের আচরণে কী ধরনের পরিবর্তন
আসলে আশিকের পরিণতি ভিন্ন হতে পারতো? 'জীবন বিনিময়' কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
০২। শহিদুল
হাসান স্বপন ও সাবরীনা আহমেদ পাপড়ি বড়দিনের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ালপোল নর্থ শহরে
সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্বপন-পাপড়ির দুই মেয়ে সমুদ্রের পানির ভাটার টানে
ডুবে যাচ্ছিল। দ্রুত তাদের বাঁচাতে তারা উভয়েই সমুদ্রে নেমে পড়েন। সন্তানদের জীবিত
উদ্ধার করতে পারলেও তারা দুইজন ডুবে যান।
গ. উদ্দীপকের স্বপন-পাপড়ি দম্পতির সাথে 'জীবন
বিনিময়' কবিতার কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক ও 'জীবন বিনিময়' কবিতার মূলভাব একই-মন্তব্যটি
ব্যাখ্যা কর।
.png)
Social Plugin