বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় - অধ্যায় ১০ ( জাতীয় সম্পদ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ) - কনসেপ্ট নোট

 



জাতীয় সম্পদ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

মৌলিক আলোচনা

জাতীয় সম্পদের ধারণা

সাধারণভাবে আমরা অর্থ, জমিজমা, বাড়িঘর, নানারকম প্রয়োজনীয় ও শৌখিন দ্রব্যসামগ্রী, স্বর্ণ-রৌপ্য ইত্যাদিকে সম্পদ বলে থাকি।

প্রকৃতপক্ষে অর্থনীতিতে কোনো বস্তু বা দ্রব্যকে সম্পদ বলতে হলে তার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক। সেগুলো হলো-

(ক) উপযোগ

(খ) অপ্রাচুর্য

(গ) বাহ্যিকতা ও হস্তান্তরযোগ্যতা

ক) উপযোগ: মানুষের অভাব পূরণে কোনো দ্রব্যের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে।

উদাহরণ: মানুষের বস্ত্রের প্রয়োজন বা অভাব আছে। শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি এসব দ্রব্যের বস্ত্রের অভাব পূরণের ক্ষমতা আছে। অর্থাৎ এগুলোর উপযোগ আছে।

খ) অপ্রাচুর্য: কোনো দ্রব্য বা সেবার চাহিদার তুলনায় যোগান বা সরবরাহের পরিমাণ কম হলে দ্রব্যটির অপ্রাচুর্য দেখা দেয়।

উদাহরণ (অপ্রাচুর্য আছে): খাদ্যদ্রব্য। যে কোনো দেশে যে কোনো সময়ে খাদ্যের সরবরাহ এর চাহিদার তুলনায় কম। সেই জন্য খাদ্য পেতে হলে এর দাম পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ খাদ্যের অপ্রাচুর্য আছে।

উদাহরণ (অপ্রাচুর্য নেই): বাতাস। নিশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মানুষের প্রতিমুহূর্তেই বাতাসের প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃতিতে বাতাস অফুরন্ত হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় এর সরবরাহ বেশি। তাই বাতাসের জন্য মানুষকে কোনো দাম দিতে হয় না। অর্থাৎ বলা যায়, বাতাসের অপ্রাচুর্য নেই।

গ) বাহ্যিকতা ও হস্তান্তরযোগ্যতা: কোনো জিনিসের উপযোগ ও অপ্রাচুর্য থাকলেই তা সম্পদ হবে না, যদি তার বাহ্যিক অস্তিত্ব না থাকে এবং তা হস্তান্তরযোগ্য না হয়।

উদাহরণ (সম্পদ নয়): স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যের উপযোগিতা এবং অপ্রাচুর্য (সবাই সবসময় সুস্থ থাকে না) থাকলেও এটি বাহ্যিক বস্তু নয় এবং হস্তান্তর করা যায় না, তাই স্বাস্থ্যকে সরাসরি সম্পদ বলা যায় না .

ব্যতিক্রম: কোনো স্বাস্থ্যবান পুরুষ যদি স্বাস্থ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে সক্ষম হন তবে তার ঐ বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্য সম্পদ বলে গণ্য হবে।

 

সম্পদের শ্রেণিবিভাগ

সম্পদকে ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক - এই পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

১. ব্যক্তিগত সম্পদ:

সংজ্ঞা: যে সকল সম্পদের মালিকানা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধীনে থাকে, সেগুলোকে ব্যক্তিগত সম্পদ বলা হয়।

উদাহরণ: ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গা-জমি, বাড়িঘর, কলকারখানা, নগদ অর্থ, গাড়ি, ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী ইত্যাদি।

২. একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ:

সংজ্ঞা: এই ধরনের সম্পদ সরাসরি হস্তান্তরযোগ্য না হলেও, ব্যক্তি এগুলো ব্যবহার করে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করতে বা আয় করতে পারে। এগুলো ব্যক্তির গুণ বা ক্ষমতা।

উদাহরণ: ব্যক্তির নিজস্ব প্রতিভা, বিশেষ কোনো বিষয়ে দক্ষতা, শারীরিক বা মানসিক যোগ্যতা ইত্যাদি।

৩. সমষ্টিগত সম্পদ:

সংজ্ঞা: সমাজের সকলে সম্মিলিতভাবে যে সকল সম্পদ ভোগ করে, সেগুলো সমষ্টিগত সম্পদ। এই সম্পদগুলোর উপর সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকে এবং এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সকলের।

উদাহরণ: রাস্তাঘাট, রেলপথ, সেতু বা বাঁধ, পার্ক বা উদ্যান, সরকারি হাসপাতাল, সরকারি স্কুল-কলেজ, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বনাঞ্চল, খনিজসম্পদ, নদ-নদী, ইত্যাদি।

৪. জাতীয় সম্পদ:

সংজ্ঞা: রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ এবং সমাজের সমষ্টিগত সম্পদকে একত্রে জাতীয় সম্পদ বলে। এর পাশাপাশি, কোনো জাতির নাগরিকদের গুণবাচক বৈশিষ্ট্য, যা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, তাও জাতীয় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

৫. আন্তর্জাতিক সম্পদ:

সংজ্ঞা: যে সকল সম্পদ বিশেষ কোনো রাষ্ট্রের মালিকানাধীন নয়, বিশ্বের সকল জাতিই সেগুলো ভোগ করতে পারে সে সকল সম্পদকে আন্তর্জাতিক সম্পদ বলে।

উদাহরণ: সাগর-মহাসাগর, পেটেন্টবিহীন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তি ইত্যাদি।

জাতীয় সম্পদের উৎস

জাতীয় সম্পদের উৎস প্রধানত দুটি।

প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ:

কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমানার ভিতরের ভূমি, ভূমির উপরিস্তিত এবং অভ্যন্তরস্থ যা কিছু সবই প্রকৃতির দান।

উদাহরণ:

প্রাকৃতিক বনাঞ্চল

বনের গাছপালা, ফলমূল, প্রাণী ও পাখিকুল

নদ-নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয় এবং এগুলোর মৎস্যসম্পদ

অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ

ভূমির অভ্যন্তরস্থ পানি

সকল রকম খনিজ সম্পদ

এ সবই প্রকৃতি প্রদত্ত জাতীয় সম্পদ।

২. মানবসৃষ্ট সম্পদ:

কোনো দেশের অধিবাসীরা তাদের শ্রম ও মূলধনের সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার, সংগ্রহ ও উত্তোলন করে এবং সেগুলোর রূপান্তর বা স্থানান্তর করে যে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করে তা মানবসৃষ্ট সম্পদ।

উদাহরণ:

মানুষ ভূমি আবাদ করে শস্য-ফল-ফুল-গাছপালা উৎপাদন করে।

জলাশয়ে মাছ চাষ করে।

খনিজসম্পদ উত্তোলন করে ব্যবহার উপযোগী করে।

ব্যক্তি নিজে উদ্যোগে বা সরকারের অর্থ ও পরিচালনায় রাস্তাঘাট, কলকারখানা, যন্ত্রপাতি, যানবাহন, সেতু এবং নানারকম স্থাপনা নির্মাণ করে।

নানারকম শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করে।

দেশের নাগরিকেরা সারা বছরব্যাপী নানারকম অর্থনৈতিক দ্রব্য ও সেবা অর্থাৎ সম্পদ সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত থাকে।

জাতীয় সম্পদের সংরক্ষণ ও অপচয় রোধ

সংরক্ষণের অর্থ বিশেষভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান।

কোনো বস্তু, দ্রব্য, প্রতিষ্ঠান, সম্পত্তি, বিশেষ যত্নসহকারে রক্ষা করা ও তার তত্ত্বাবধান করাকে বলে সংরক্ষণ।

আমরা জানি, একটি দেশের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পদ ও সমষ্টিগত সম্পদকে একত্রে জাতীয় সম্পদ বলা হয়।

সমষ্টিগত সম্পদের মধ্যে সকল জনগণ সম্মিলিতভাবে যেসব সম্পদের মালিক সেগুলো এবং রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সকল প্রাকৃতিক ও উৎপাদিত সম্পদ অন্তর্ভুক্ত।

তাই জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ বলতে ব্যক্তিগত সম্পদ ও সমষ্টিগত সম্পদ উভয়েরই সংরক্ষণ বোঝায়।

(ক) ব্যক্তিগত সম্পদ সংরক্ষণ

ব্যক্তি সাধারণত তার নিজস্ব সম্পদ, যেমন-অর্থ সম্পদ,

ভূসম্পত্তি, স্বর্ণ-রৌপ্য, অলংকার, আসবাবপত্র, নিজস্ব

কলকারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ইত্যাদি নিজ স্বার্থেই বিশেষ যত্নের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করে। শুধু তাই নয়, সে এগুলোর উন্নয়ন করতে ও বৃদ্ধি করতেও তৎপর থাকে। এছাড়া প্রত্যেকেই নিজস্ব সম্পদের অপচয় রোধ করতে এগুলোর তত্ত্বাবধানও করে। সংরক্ষণ কার্যক্রম নিম্নরূপ:

কোন সম্পদ কোথায় কী অবস্থায় আছে তার খোঁজখবর রাখা

সম্পদের কোনোরকম ক্ষতির কারণ ঘটলে তা রোধ করা বা দূর করা,

সম্পদ নষ্ট হলে যথাসম্ভব তা পূরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া।

ব্যক্তি সাধারণত তার নিজস্ব সম্পদ অযথা ব্যয় করে না বা অপচয় করে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না করার জন্য সে সর্বদা সতর্ক থাকে।

(খ) সমষ্টিগত সম্পদ সংরক্ষণ

সমষ্টিগত সম্পদগুলো হলোঃ রাস্তাঘাট, সেতু, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যানবাহন (গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ, বিমান ইত্যাদি) ও কলকারখানা, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, অফিস ভবন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূমি ও ভূমির উপরিস্থিত এবং অভ্যন্তরভাগের সম্পদ (বনাঞ্চল, নদনদীনালা, জলাশয়, মৎস্যসম্পদ ইত্যাদি) ইত্যাদি।

সমষ্টিগত সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাঃ

রাষ্ট্র ও জনগণ সম্মিলিতভাবে এসব সম্পদের অধিকারী।

জনগণ এগুলো ব্যবহার করে ও ভোগ করে।

এগুলোর পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

তাই এসব সমষ্টিগত সম্পদ সংরক্ষণে প্রতিটি নাগরিককেই বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

সমষ্টিগত সম্পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক।

বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদের সংরক্ষণ ও অপচয় রোধে করণীয়

জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রীয় যেসব ব্যবস্থা আছে, সেগুলো যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। আমরা জানি যে, সেতু, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, অফিস ভবন ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তা রক্ষী থাকে। এসব কোনো সময় অরক্ষিত দেখলে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো।

কেউ যেন এসব সম্পদের কোনো ক্ষতিসাধন না করে সে বিষয়ে সচেতন থাকা। এ ধরনের কোনো অপকর্মের বিষয়ে জানলে বা দেখলে যথাযথ ব্যক্তি/কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সল্লাজিত বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে গাছ কাটা, পশুপাখি শিকার করা ইত্যাদি জাতীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হিসেবে গণ্য হবে।

জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও বৃদ্ধিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকা।

সমষ্টিগত বা জাতীয় সম্পদের অপব্যবহার ও অপচয়রোধে সচেতন ও সচেষ্ট থাকা, যেমন- রাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক সরবরাহকৃত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি অপ্রয়োজনে খরচ না করা এবং এগুলো ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া।

সম্পদ সংরক্ষণের জন্য নিজ নিজ কর্তব্য বিষয়ে প্রতিটি নাগরিক সচেতন ও সচেষ্ট থাকলে জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ ও এগুলোর অপচয় রোধ করা কঠিন নয়। নাগরিকদের সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমে তাদের করণীয় সম্পর্কে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সম্পদ সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের জন্য নির্ধারিত সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য সংস্থার দলিলসমূহে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত থাকে। সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দের এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে তৎপর থাকা এবং এসব দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা

বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

মানুষের জীবনধারণের জন্য বহুবিধ প্রয়োজন বিদ্যমান।

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান যেমন অপরিহার্য, তেমনি উন্নত জীবন ধারণের জন্য সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, চিত্তবিনোদন এবং একটি সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থাও প্রয়োজন।

এছাড়া সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজন বিনোদনের ব্যবস্থা, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবার এবং সমাজ ব্যবস্থা। এসব প্রয়োজন থেকে অভাবের সৃষ্টি হয়। প্রকৃতিতে সম্পদের পরিমাণ সর্বদা সীমিত। অভাব পূরণের জন্য মানুষ চেষ্টা করে এবং উৎপাদন করে।

উৎপাদন: উৎপাদন হলো দ্রব্য বা সম্পদের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর। যেমন, কাঠ থেকে চেয়ার তৈরি করা হয়। এ রূপান্তরই উৎপাদন।

উৎপাদনের উপাদান:

উৎপাদনের জন্য চারটি উপাদান আবশ্যক: ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন।

এগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

ভূমি: সাধারণ অর্থে ভূমি বলতে জমি বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে ভূমি বলতে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন-জমি, জমির উপরিস্তিত এবং অভ্যন্তরের সকল কিছুকে বোঝায়।

শ্রম: উৎপাদন কাজে ব্যবহারযোগ্য মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতাকে শ্রম বলে।

মূলধন: উৎপাদিত উপদানকে মূলধন বলে। মূলধন হলো সেই ধরনের সম্পদ যা সরাসরি ভোগ করা হয় না কিন্তু যা কাজে লাগিয়ে অধিকতর উৎপাদন করা হয়। যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত ভবন, অর্থ ইত্যাদি হলো মূলধন।

সংগঠন: উৎপাদনের তিনটি উপকরণ, যথা-ভূমি, শ্রম ও মূলধনকে সমন্বিত করে উৎপাদন কার্য পরিচালনা ও সম্পাদন করাকে বলে সংগঠন। যিনি সংগঠন করেন, তাকে বলে সংগঠক বা উদ্যোক্তা। উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা রয়েছে, সংগঠক সেটা বহন করেন।

উৎপাদন প্রক্রিয়ার উদাহরণ:

একটি চেয়ার তৈরির প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা যাক:

ভূমি: চেয়ার তৈরির জন্য কাঠ বন থেকে সংগ্রহ করা হয়, যা প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূমির অংশ।

মূলধন: কাঠ সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং কাঠকে চেয়ারে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম মূলধনের উদাহরণ।

শ্রম: যে শ্রমিক বা কারিগর তার শারীরিক ও মানসিক শ্রমের মাধ্যমে কাঠ থেকে চেয়ার তৈরি করেন।

সংগঠন: যিনি এই ভূমি, মূলধন ও শ্রমকে একত্রিত করে চেয়ার উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিকল্পনা, পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান করেন, তিনিই সংগঠক বা উদ্যোক্তা। এভাবেই মানুষ তার বিভিন্ন অভাব পূরণের জন্য এই চারটি উপাদানের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উৎপাদন কার্য সম্পাদন করে।

বণ্টন:

মোট উৎপাদিত সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয় যখন উৎপাদনের চারটি উপাদানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়, তখন তাকে বণ্টন বলে।

মোট উৎপাদিত সম্পদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ চারটি উপাদানের মধ্যে অর্থাৎ খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা হিসেবে ভাগ হয়ে যায়। এগুলো হচ্ছে উৎপাদনের উপাদানসমূহের আয়৷

এই আয়ের মাধ্যমেই ভূমির মালিক, শ্রমিক, মূলধনের মালিক এবং উদ্যোক্তা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে থাকেন।

অভাবঃ কোনো বস্তুগত (যেমন খাদ্য) বা অবস্তুগত (যেমন- শিক্ষা) দ্রব্যের অভাব পূরণের আকাঙ্ক্ষাই হলো অভাব

উৎপাদিত সম্পদ উৎপাদনের উপাদানগুলোর মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকেই বণ্টন বলা হয়।

অর্থমানুষ তার নানাবিধ অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে। অর্থনৈতিক কার্যাবলির পর্যায়ক্রম:

অভাব প্রচেষ্টা উৎপাদন বণ্টন ভোগ

অর্থনৈতিক কার্যাবলির গুরুত্ব

উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভূমির ব্যবহারের জন্য ভূমির মালিককে খাজনা, শ্রমিকের কাজের বিনিময়ে মজুরি, মূলধনের ব্যবহারের জন্য মালিককে সুদ এবং সংগঠককে মুনাফা দেওয়া হয়।নৈতিক কার্যাবলির পর্যায়ক্রম:

এই পারিতোষিকগুলো সুষ্ঠু ও ন্যায্যভাবে বণ্টিত হলেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসে এবং সমাজের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধিত হয়।

অন্যথায়, বণ্টন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যপূর্ণ হলে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয় এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানের প্রত্যাশিত উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এমনকি সমাজে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হতে পারে।

মোট উৎপাদিত সম্পদের অর্থমূল্য কীভাবে উৎপাদনের উপাদানগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হয়, তা নির্ভর করে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা Economic System -এর ওপর।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (Economic System):

সংজ্ঞাঃ যে ব্যবস্থা বা কাঠামোর আওতায় উৎপাদনের উপাদান-সমূহের মালিকানা নির্ধারিত হয় এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া, উৎপাদিত সম্পদের বণ্টন ও ভোগ প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

এ ব্যবস্থা জনগণের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং অর্থনীতিবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত কাঠামোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে।

প্রধান প্রকারভেদ

বর্তমান বিশ্বে প্রধানত চার ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর আছে:

১. ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

২. সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

৩. মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

৪. ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

১. ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিকানা:

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ, যথা-ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন ব্যক্তি মালিকানাধীন।

ব্যক্তি তার সম্পদ/আয়ের সাহায্যে ভূমির মালিকানা অর্জন করতে পারে, শ্রমিককে নিয়োগ দিতে পারে, মূলধন বা পুঁজি গঠন করতে পারে।

ব্যক্তি তার নিজস্ব সম্পদ স্বাধীনভাবে ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারে।

এসব বিষয়ে ব্যক্তি নিজেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতা:

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি এককভাবে বা গোষ্ঠীগতভাবে যে কোনো দ্রব্য/সেবা উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারে।

এক্ষেত্রে কোনো সরকারি বিধি-নিষেধ নেই।

এ ব্যবস্থায় প্রায় সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলী ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে অনেক সময় মুক্তবাজার অর্থনীতিও বলা হয়।

এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দ্রব্যের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ সবই বাজারের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়।

ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা এবং উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ নাই বললেই চলে।

অবাধ প্রতিযোগিতা: যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারে। তাই বাজারে একই দ্রব্যের বহুসংখ্যক উৎপাদক বা বিক্রেতা থাকেন এবং তাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে। বিক্রেতা এবং দ্রব্যের ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।

ভোক্তার স্বাধীনতা:

ভোগঃ মানুষের অভাব পূরণের জন্য কোনো দ্রব্যের উপযোগিতা ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে ভোগ বলে।

খাদ্য দ্বারা মানুষ ক্ষুধা মেটায়। সুতরাং খাদ্যদ্রব্য মানুষ ভোগ করে।

কিন্তু কোনো কারণে খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হলে তা ভোগ হবে না। মানুষের অভাব পূরণের জন্য ব্যবহার করার হলেই ভোগ হবে।

ভোক্তা কোনো দ্রব্য কী পরিমাণে ক্রয় ও ভোগ করবে, এ বিষয়ে সে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে তার পছন্দ, আয় ও দ্রব্যের বাজার মূল্যের দ্বারা এ সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়।

সর্বাধিক মুনাফা অর্জন:

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।

বিনিয়োগঃ উৎপাদন কার্যে নিয়োজিত জমি ও অন্যান্য জিনিসের বিনিয়োগের ফলে বিনিযোগকারী যে মুনাফা অর্জন করে তাই হলো বিনিযোগ। বিদ্যমান মূলধন সামগ্রীর সাথে নতুন মূলধন (যেমন ঘর বা যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম, উৎপাদন কাঁচামাল প্রভৃতি) যুক্ত করাকে বলে বিনিয়োগ।

যেসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে মুনাফার সম্ভাবনা বেশি, ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উৎপাদনকারীরা সেসব দ্রব্যই বেশি বিনিয়োগ করে।

শ্রমিক শোষণ:

উদ্দেশ্য: উদ্যোক্তা বা পুঁজিপতিদের প্রধান লক্ষ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। তাই উদ্যোক্তা বা পুঁজিপতিরা উৎপাদন ব্যয় কম রাখতে ও বিক্রয় মূল্য বেশি পেতে চেষ্টা করে।

শোষণ প্রক্রিয়া:

উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য শ্রমিককে তার ন্যায্য মজুরির চেয়ে কম মজুরি দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নেওয়া হয়।

উদ্যোক্তা বা পুঁজিপতিরা শ্রমিককে তার শ্রম দ্বারা উৎপাদিত মোট মূল্যের চেয়ে কম মজুরি দেয়। এই কম দেওয়া অংশই উদ্বৃত্ত মূল্য। এই উদ্বৃত্ত মজুরি পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তার কাছে মুনাফা হিসেবে সঞ্চিত হয়। এভাবে উৎপাদিত সম্পদ বণ্টনে অসমতা ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়।

ফলাফল ও প্রভাব:

উৎপাদিত সম্পদের বণ্টন অসম ও বৈষম্যমূলক হয়।

শ্রমিক প্রাপ্ত শ্রমের চেয়ে কম মজুরি পান আর পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তা তাদের প্রাপ্যের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেন।

যেহেতু পুঁজিপতির সংখ্যা কম, তাই একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর হাতেই সমাজের অধিকাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়।

যেহেতু শ্রমিক অগণিত, তাই সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠী মোট সম্পদের ক্ষুদ্র অংশের সুবিধা ভোগ করে।

২. সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিকানা, উৎপাদন প্রক্রিয়া, উৎপাদিত সম্পদের বণ্টন ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়ে আলাদা। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিকানা:

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন।

সম্পদের ওপর কোনো রকম ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না।

সমাজতন্ত্র হচ্ছে 'সমাজের অর্থনৈতিক গণতন্ত্র'। এই সংগঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র উৎপাদনের চারটি উপাদানকে একত্রিত করে একটি সার্বিক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অনুসারে উৎপাদন কার্যের নির্দেশনা দেয় ও তা পরিচালনা করে।

উদ্দেশ্যঃ সমাজের সকল সদস্য এই পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সর্বাধিক কল্যাণ অর্জন করবে এটাই সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য।

অর্থনৈতিক কার্যাবলীর সরকারি নির্দেশনা:

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে মৌলিক সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে-সরকার।

কোনো দ্রব্য কী পরিমাণে উৎপাদিত হবে এবং এর দ্বারা কারা কিভাবে উপকৃত হবে এ সবই সরকার নির্ধারণ করে। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ।

এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ ও বিনিয়োগের সুযোগ নেই।

ভোক্তার স্বাধীনতার অভাব:

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদকের যেমন উৎপান বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা নেই, তেমনি ভোক্তাগণও নিজ ইচ্ছামতো দ্রব্যসামগ্রী ভোগের সুযোগ পান না।

উৎপাদক সরকার নির্ধারিত দ্রব্যসামগ্রী প্রয়োজন মতো ক্রয় ও ভোগ করে।

তবে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির নির্বাচন ও ক্রয়ের ব্যাপারে স্বাধীনতা থাকে।

কোনো দ্রব্য কী পরিমাণে উৎপাদিত হবে এবং এর দ্বারা কারা কিভাবে উপকৃত হবে এ সবই সরকার নির্ধারণ করে। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ।

এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ ও বিনিয়োগের সুযোগ নেই।

ভোক্তার স্বাধীনতার অভাব:

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদকের যেমন উৎপান বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা নেই, তেমনি ভোক্তাগণও নিজ ইচ্ছামতো দ্রব্যসামগ্রী ভোগের সুযোগ পান না।

উৎপাদক সরকার নির্ধারিত দ্রব্যসামগ্রী প্রয়োজন মতো ক্রয় ও ভোগ করে।

তবে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির নির্বাচন ও ক্রয়ের ব্যাপারে স্বাধীনতা থাকে।

অর্থনৈতিক কার্যাবলীর মূল উদ্দেশ্য:

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

এখানে ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের সুযোগ নেই।

আয় বণ্টন:

ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মুনাফার মধ্যে শ্রমিকের মজুরির একটি অংশ থাকে, যা তাকে দেওয়া হয় না। পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তা প্রধান অংশ গ্রহণ করে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্জিত মুনাফার মালিক রাষ্ট্র বা সরকার। এক্ষেত্রে ভূমি ও মূলধনের মালিকও সরকার।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যসমূহ:

রাষ্ট্র কর্তৃক মজুরি ও ব্যয় নির্বাহ: সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রই শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করে এবং উৎপাদনের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করে। ফলে ধনতান্ত্রিকের মতো পুঁজিপতি কর্তৃক শ্রমিক শোষণের সুযোগ থাকে না।

মজুরি প্রদানের মূলনীতি: 'প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে'।

বেকারত্বহীনতা: এই ব্যবস্থায় বেকারত্ব থাকে না। কারণ রাষ্ট্র প্রত্যেকের সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।

আয়ের সমতা: সকলের আয় প্রায় এক রকম। কিন্তু কেউ উৎপাদনে তার অবদান অনুসারে প্রাপ্য আয় থেকে বঞ্চিত হয় না।

সম্পদের সুষম বণ্টন: অর্জিত সম্পদের সুষম বণ্টন হয়।

বৈষম্য হ্রাস: এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আয় বৈষম্য ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়ে কম।

প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন ও বণ্টন: সমাজতান্ত্রিক

অর্থনীতিতে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

রাষ্ট্র কর্তৃক কার্যক্রম পরিচালনাঃ সকল অর্থনৈতিক

কার্যক্রম একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার আওতায় রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হয়। তাই সম্পদের অপচয় অপেক্ষাকৃত কম হয়। এর ফলে মোট জাতীয় উৎপাদনও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদের সুষম বণ্টন হয়।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা:

ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অভাব: উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাধীনতা সীমিত থাকে।

প্রতিযোগিতা ও উদ্যম হ্রাস: স্বাধীনতা না থাকায় উৎপাদন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও উদ্যম হ্রাস পেতে পারে।

সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়া: সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, বিশেষত ব্যক্তির সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে।

৩. মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

মিশ্র অর্থনীতি হলো ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা। ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় দ্রব্য উৎপাদন, বিনিয়োগ ও ভোগের ক্ষেত্রে যেমন ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত, তেমনি সরকারি নিয়ন্ত্রণেও পরিচালিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে।

মিশ্র অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহাবস্থান:

ব্যক্তি মালিকানা ও ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু কিছু খাতে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সরকারি মালিকানা, উদ্যোগ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকে।

জনস্বার্থের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ও সেবা, যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষার আয়োজন প্রভৃতি প্রধানত সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হয়। তবে এক্ষেত্রে আংশিক ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগও দেখা যায়।

মৌলিক ও বৃহৎায়তন শিল্প, জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রধান আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য, জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সাধারণত সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে।

মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, যেমন- কৃষিপণ্য, কাপড় ও তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ব্যক্তিগত ব্যবহারের যানবাহন ইত্যাদি প্রধানত ব্যক্তিগত উদ্যোগে উৎপাদিত ও সরবরাহ করা হয়।

প্রতিযোগিতা:

মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতের প্রাধান্য থাকে।

দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদকের প্রতিযোগিতা এবং দাম নির্ধারণে চাহিদা ও যোগানের স্বতন্ত্র ক্রিয়া-বিক্রিয়া বিদ্যমান থাকে।

দাম ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে ক্রেতার পছন্দ এবং উদ্যোক্তার বিনিয়োগ নির্ধারিত হয়।

মুনাফা অর্জন:

সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও বেসরকারি খাতের প্রাধান্য থাকায় উৎপাদনকারীদের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য থাকে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাতসমূহও কমবেশি মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত থাকে।

তবে জনকল্যাণমূলক ও সেবামূলক কার্যকলাপে (যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা) মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে না।

কিছু জনকল্যাণমূলক খাতে (যেমন টেলিযোগাযোগ, পরিবহন) মুনাফা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা হয়।

উদ্যোক্তা ও ভোগকারীর স্বাধীনতা:

 

জনসাধারণের ব্যবহার্য অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপিত থাকে।

একাধিক উৎপাদনকারী প্রতিযোগিতামূলক দামে দ্রব্য বাজারে ছাড়তে বাধ্য হন, যা জনসাধারণের জন্য উপকারী।

ভোগকারী অবাধে সাধারণ দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগ করতে পারে।

তবে বিশেষ অবস্থায় বা দুর্যোগকালে উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটলে সরকার যে কোনো দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করতে পারে।

আয় বণ্টন:

ব্যক্তিগত মালিকানার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় অংশ সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

ব্যক্তি মালিকানাধীন অংশ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় এবং প্রায়শই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মতো শ্রমিককে প্রাপ্ত মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয় (উদ্বৃত্ত মজুরি মুনাফার অন্তর্ভুক্ত হয়)।

ফলে উৎপাদিত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হয় না এবং উৎপাদনের উপাদানের আয়ে বৈষম্য দেখা দেয়, যা সমাজের সকল জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করে না।

সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন অংশে সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন হয় এবং শ্রমিকরা সাধারণত ন্যায্য মজুরি পায়, ফলে সম্পদের আংশিক সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।

সামগ্রিকভাবে মিশ্র অর্থনীতিতে সম্পদ বা আয়ের আংশিক সুষম বণ্টন ঘটে এবং শ্রমিক শোষিত ও বঞ্চিত হওয়ায় আয় বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়।

৪. ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

ইসলামি অর্থব্যবস্থা হলো ঐশী বা কিতাবি উৎসনির্ভর একটি ব্যবস্থা যা পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যে কাজ করে। এই ব্যবস্থায় ইসলামি অর্থব্যবস্থার বিধান অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বস্তুসামগ্রী ও পরিবেশ-প্রকৃতি ব্যবহার করে ধর্মনিয়মাবলির ভিত্তিতে সম্পদ সৃষ্টি ও ভোগ করা হয়।

ভিত্তি: ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি হলো পবিত্র কুরআন ও হাদিস।

মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:

সম্পদের মালিকানা:

ইসলামে সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত।

ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পদ মানুষ তার ইচ্ছামতো ব্যবহার ও ভোগ করতে পারে।

এ সম্পদ সে তার উত্তরাধিকারীদের নিকট হস্তান্তর করতে পারে।

শরিয়াহভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যাবলি:

ইসলামি অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সকল কার্যাবলি শরিয়াহ বিধান অনুসারে পরিচালিত হয়।

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভ, পবিত্র কুরআনের নির্দেশাবলি এবং রাসুল (সা.) এর হাদিসের বিধান অনুসারে কার্যাবলির নীতি ও নীতিমালা নির্ধারিত হয়।

বৈধ ব্যবসা ও উৎপাদনের উপাদানসমূহের পারিতোষিক:

যে কোনো ব্যক্তি একক বা গোষ্ঠীগতভাবে শরিয়াহসম্মত দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করতে পারে।

প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় ও ভোগ করা যায়।

উৎপাদনের লভ্যাংশ 'হালাল' বা ইসলামসম্মত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন নিশ্চিত করে।

ইসলামি কল্যাণমুখী শরিয়াহসম্মত উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়

ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সুদবিহীন উৎপাদন কার্যক্রম প্রচলিত আছে।

ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেও উৎপাদন কার্যক্রম গৃহীত হয়।

যাকাত ও নিসাব:

ব্যক্তির নিকট নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকলে তার একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টন করে দেওয়াকে যাকাত বলা হয়।

সম্পদশালী ব্যক্তির প্রধান বাধ্যতামূলক দানমূলক ন্যূনতম যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয় তাকে ইসলামি ভাষায় নিসাব বলে।

সুদবিহীন লেনদেন:

যে কোনো অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের অন্যতম উপাদান পুঁজি বা মূলধন। মূলধনের জন্য সুদ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সুদ লেনদেন হারাম বা নিষিদ্ধ।

ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদমুক্ত আমানত রাখা ও ঋণ গ্রহণ করার ব্যবস্থা আছে।

উৎপাদক ও ব্যবসায়ী এই ঋণ গ্রহণ করতে পারেন এবং ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত লাভ থেকে ঋণদানকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে (অর্থাৎ ব্যাংককে) লভ্যাংশ পরিশোধ করতে পারেন।

এ অর্থব্যবস্থায় শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা যথাসময়ে পরিশোধ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে উৎপাদিত সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন সম্ভব হয়।

বাংলাদেশে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

প্রাচীন ও ঔপনিবেশিক (বৃটিশ শাসনামলে) আমলে:

প্রাচীন বাংলা, মুসলীম ও বৃটিশ শাসনামলে প্রধানত সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

এই ব্যবস্থা ছিল ভূস্বামীকেন্দ্রিক। [ভূস্বামী মানে হলো জমির মালিক বা ভূ-সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তি]

উত্পন্ন দ্রব্যের পরিমাণ ভূমির মালিককে দেওয়া হতো (ভূমি)।

অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর।

ভূস্বামী ছিলেন অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণে শ্রমজীবী ও পেশার লোকজন (কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, ছুতার, স্বর্ণকার, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক প্রভৃতি) থাকত।

ভূস্বামী তাঁর সম্পদ বা সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব প্রজাকূল বা লাঠিয়াল বাহিনী রাখতেন।

বৃটিশ শাসনামলে এই ভূস্বামীদের জমিদার করা হতো।

পাকিস্তান আমলে:

পাকিস্তান আমলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত করে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা হয়।

তবে বেশ কিছুকাল যাবৎ জমিদারি প্রথার প্রভাব ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদ্যমান ছিল।

পাকিস্তান আমলে অর্থনৈতিকভাবে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাধান্য লাভ করে।

স্বাধীনতার পরবর্তী আমলে:

১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

স্বাধীনতার পর দেশে সমাজতন্ত্র অভিমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বড়ো বড়ো কলকারখানা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, পরিবহন, প্রধান প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক শিক্ষা, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। (সমাজতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা)

পাকিস্তান আমলে কলকারখানা, ব্যবসায় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই অবাঙালি মালিকদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এই অবাঙালি মালিকেরা স্বাধীনতার পর দেশত্যাগ করলে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

সদ্য স্বাধীন দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতি, অবকাঠামো ও বিপর্যস্ত সমাজের সমস্যা ও সংকট মোকাবিলায় সরকারকে সর্বোত্তম নিয়োগ করতে হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে দক্ষ প্রশাসক, ব্যবস্থাপক, উদ্যোক্তাসহ মানবসম্পদের ব্যাপক ধ্বংস হওয়ায় প্রতিষ্ঠানসমূহের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লোকসানের সম্মুখীন হয়।

ফলস্বরূপ, বেসরকারি খাত ও ব্যক্তি উদ্যোগকেও সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

বর্তমান প্রচলিত ব্যবস্থা

বেসরকারীকরণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসার:

বেসরকারি খাত ও ব্যক্তি উদ্যোগ সম্প্রসারণের এই ধারা বর্তমান সময় পর্যন্তও চালু আছে।

এই ধারায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রাষ্ট্রায়ত্ত্বকৃত কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণ করা শুরু হয়।

বর্তমান বিশ্বে বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সমতালে চলার লক্ষ্যে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অর্থনীতিকে পরিচালনা করা হচ্ছে।

বর্তমান অর্থনীতির কিছু খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেও পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহাবস্থান:

বর্তমানে দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রাধান্যসহ মিশ্র অর্থনৈতিক অবস্থা বিদ্যমান।

প্রধান প্রধান শিল্প, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের অন্তর্ভুক্ত।

অর্থনীতির কিছু খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেও পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে অর্থনীতির প্রায় সব খাত ক্রমশ বেসরকারি উদ্যোগের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে যাচ্ছে।

দেশে উৎপাদন ও বণ্টন প্রক্রিয়ার সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহাবস্থান রয়েছে।

বাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা ও মূল্য নির্ধারণ

অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আর একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বেসরকারি উদ্যোগ সম্প্রসারণের সাথে সাথে বাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়ার দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।

এই দামই আবার উৎপাদনের প্রকৃতি ও পরিমাণ এবং ক্রেতার ভোগকে প্রভাবিত করে।

মূলধন বা পুঁজির উৎস:

দেশে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন বা পুঁজি বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই সংগৃহীত হয়।

তবে বৈদেশিক ঋণ, সাহায্য, অনুদান এবং ব্যক্তিগত পুঁজিরও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

উদ্যোক্তা ও ভোগকারীর স্বাধীনতা এবং মুনাফা উদ্দেশ্য:

বেসরকারি খাত ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তা ও ভোগকারীর স্বাধীনতা আছে।

যে কোনো উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারী যে কোনো দ্রব্য যে কোনো পরিমাণ উৎপাদন করতে পারে।

এই উৎপাদন কার্য অবশ্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের বণ্টন পরিস্থিতি

প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা:

বাংলাদেশে প্রধানত ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান।

তবে অর্থনীতির কিছু খাতে বিশেষত সেবাক্ষেত্রে সরকারি মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

তাই এটাকে মিশ্র অর্থব্যবস্থাও বলা যায়।

জাতীয় আয়:

আমরা জানি ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন উৎপাদনের চারটি উপাদান।

ভূমির আয়ে খাজনা।

শ্রমের আয়ে বলে মজুরি।

মূলধনের আয় হলো সুদ।

সংগঠন বা উদ্যোগের আয় হচ্ছে মুনাফা।

এ চারটির সমষ্টিই জাতীয় আয়।

উৎপাদনের উপাদানের মালিকানা ও বণ্টন:

উৎপাদনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূলধনের মালিক বা পুঁজিপতি এবং সংগঠক একই ব্যক্তি, কারণ মূলধন ছাড়া

উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় না।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তা। বৃহত্তর অংশই শ্রমিক বা মজুর।

পুঁজিবাদী বৈশিষ্ট্য ও শ্রমিকের শোষণ:

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পুঁজিপতিদের দ্বারা শ্রমিকের শোষণ।

শ্রমিককে তার প্রাপ্য ও ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না।

তার প্রাপ্য মজুরির একটি বড়ো অংশ পুঁজিপতিদের কাছে সুদ ও মুনাফা হিসেবে সঞ্চিত হয়।

জাতীয় আয়ের বৃহত্তর অংশ অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভোগ করে আর ক্ষুদ্রতর অংশ বঞ্চিত হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

বাংলাদেশের আয় বণ্টন পরিস্থিতি:

বাংলাদেশে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রায় সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মতো বাংলাদেশেও শ্রমিকদের মজুরির নিম্নহার এবং উদ্যোক্তাদের মুনাফার উচ্চহার লক্ষণীয়।

সুদ এবং খাজনা উচ্চহারে পরিশোধ করা হয়।

সরকারি খাতের প্রভাব: সরকারি খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি তুলনামূলকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বেসরকারি খাতের প্রভাব: অর্থনীতির খাতসমূহের অধিকাংশই বেসরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকায় বাংলাদেশে আয় বৈষম্য রয়েছে। ফলে শ্রমিক শ্রেণির জীবনযাত্রার মান নিম্ন।

সৃজনশীল

প্রশ্ন ১। ঘটনা-১: জামশেদ আলী 'ক' দেশে বাস করেন। তার একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেখানে প্রায় ৩০ জন্য কর্মচারী কাজ করে। জামশেদ আলী তার কর্মচারীদের কম বেতন দিয়ে নিজের লাভের। দিকে তিনি সবসময়ই প্রাধান্য দেন।

ঘটনা-২: শরীফ চৌধুরী নামে একজন সরকারি কর্মকর্তা 'খ'

দেশে বসবাস করেন। তিনি লক্ষ করেন, এদেশের উৎপাদন সংক্রান্ত সব কাজেই সরকারি নির্দেশনা থাকে। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো শিল্পকারখানা স্থাপন করা যায় না। যদিও মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণ এদেশের মূল্য লক্ষ্য।

[ঢাকা বোর্ড ২০২৩]

(ক) উপযোগ কাকে বলে?

(খ) সূর্যের আলো সম্পদ নয় কেন?

(গ) 'ক' দেশটিতে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) 'খ' দেশটিতে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মোট জাতীয় উৎপাদন বাড়ে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।" তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।

 

১ নং প্রশ্নের উত্তর:

(ক) কোনো দ্রব্যের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে।

খ) অর্থনীতিতে 'সূর্যের আলো' সম্পদ নয়। কারণ এর মাঝে সম্পদের বৈশিষ্ট্যসমূহের উপস্থিতি নেই। প্রকৃত অর্থে কোনো বস্তু বা দ্রব্যকে সম্পদ বলতে হলে সে বস্তুর উপযোগ, অপ্রাচুর্য, বাহ্যিকতা এবং হস্তান্তরযোগ্যতা থাকতে হবে। 'সূর্যের আলো' এর মাঝে সম্পদের সকল বৈশিষ্ট্য না থাকায় এটি সম্পদ নয়।

(গ) উদ্দীপকের 'ক' দেশটিতে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা প্রচলিত। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ব্যক্তি বা বেসরকারি উদ্যোগ সম্ভাব্য সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উৎপাদনের উপাদানসমূহ যেমন- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন ব্যক্তিমালিকানাধীন। অর্থাৎ ব্যক্তি, শ্রমিককে তার নিজের মতো করে বেতন নির্ধারণ করে নিয়োগ দিতে পারেন, মূলধন বা পুঁজি গঠন করেন। এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে থাকে বিধায় উদ্যোক্তা বা পুজিপতিরা দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় কম রাখতে ও বিক্রয় মূল্য বেশি পেতে চেষ্টা করে। উৎপাদন ব্যয় কম রাখার জন্য শ্রমিককে তার ন্যায্য মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয়। এই উদ্বৃত্ত মজুরি পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তার কাছে মুনাফা হিসেবে সঞ্চিত হয়। এভাবে শ্রমিক প্রাপ্যের চেয়ে কম মজুরি পান আর পুঁজিপতি ও উদ্যোক্তা তাদের প্রাপ্যের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেন। উদ্দীপকের ঘটনা-১ এ জামশেদ আলী 'ক' দেশে বাস করেন। তার একটি, রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন কর্মচারী কাজ করে। জামশেদ আলী তার কর্মচারীদের কম বেতন দিয়ে নিজের লাভের দিকে তিনি সবসময়ই প্রাধান্য দেন। জামশেদ আলীর 'ক' দেশে পরিচালিত এ কাজটি ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

(ঘ) 'খ' দেশটিতে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মোট জাতীয় উৎপাদন বাড়ে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন হয়। বক্তব্যটির সাথে আমি একমত।

উদ্দীপকের 'খ' দেশটিতে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত সেটি হলো সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা। সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয়

মালিকানাধীন। সম্পদের ওপর কোনো রকম ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো 'শিল্পকারখানা স্থাপন করা যায় না এবং কোনো কিছু উৎপাদনও করা যায় না। সরকার দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। রাষ্ট্র একটি সার্বিক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে উৎপাদন কার্যের নির্দেশনা দেয় ও তা পরিচালনা করে। এ অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। উদ্দীপকে 'খ' দেশটিতে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়াতে বলা যায়, 'খ' দেশটিতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মোট জাতীয় উৎপাদন বাড়ে এবং সম্পদের-সুষম কটন হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রই শ্রমিকের মজুরি প্রদান করে এবং উৎপাদনের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করে। ফলে ধনতন্ত্রের মতো পুঁজিপতি কর্তৃক শ্রমিককে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকে না।

সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের 'খ' দেশের সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরকারি পরিচালনায় সুষমভাবে পরিচালিত হয়। তাই জাতীয় উৎপাদন বাড়ে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।

প্রশ্ন ২। দৃশ্যকল্প-১: সিয়াম পরীক্ষা শেষে কুয়াকাটা বেড়াতে গেল। যাবার পথে তারা পদ্মা সেতু অতিক্রম করে। সেতুটি দেখে সিয়ামের মন আনন্দে ভরে গেল।

দৃশ্যকল্প-২: জনাব রতনের দেশের অর্থনীতিতে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের সহঅবস্থান লক্ষ করা যায়। জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা, বৃহত্তর অংশই শ্রমিক বা মজুর।

[রাজশাহী বোর্ড ২০২৩]

(ক) উপযোগ কী?

(খ) ফ্যানের বাতাস সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় কেন?

(গ) দৃশ্যকল্প-১-এ কোন ধরনের সম্পদ প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) "তুমি কি মনে কর জনাব রতনের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর।" -উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। [রাজশাহী বোর্ড ২০২৩]

২ নং প্রশ্নের উত্তর:

(ক) কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাই হলো উপযোগ।

(খ) সম্পদ হওয়ার সকল বৈশিষ্ট্য (উপযোগ, অপ্রাচুর্য, বাহ্যিকতা ও হস্তান্তরযোগ্যতা) ফ্যানের বাতাসে বিদ্যমান বলে ফ্যানের বাতাসকে সম্পদ বলা হয়। প্রকৃতির বাতাস প্রকৃতিতে অফুরন্ত পাওয়া যায়, অর্থাৎ, প্রকৃতির বাতাসের অপ্রাচুর্য নেই তাই প্রকৃতির বাতাস সম্পদ নয়। কিন্তু ফ্যানের বাতাস পাওয়ার জন্য মানুষকে অর্থ ব্যয় করতে হয় তাই ফ্যানের বাতাসের অপ্রাচুর্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর সাথে ফ্যানের বাতাসের সম্পদের সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তাই ফ্যানের বাতাস সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

(গ) উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ প্রতিফলিত বিষয়টি হলো 'স্বপ্নের পদ্মাসেতু'। এটি একটি রাষ্ট্রের সমষ্টিগত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত।

আমরা জানি, সম্পদকে ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত,

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এই পাঁচ শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায। এর মধ্যে যে সম্পদ সমাজের সকলে সম্মিলিতভাবে ভোগ করে, তাকে সমষ্টিগত সম্পদ বলা হয়। এ সম্পদের ওপর সকল নাগরিকেরই সমান অধিকার থাকে। থাকে। যেমন- রাস্তাঘাট, রেলপথ, বাঁধ, পার্ক, সরকারি হাসপাতাল, কালভার্ট, সেতু প্রভৃতি সমষ্টিগত জাতীয় সম্পদের উদাহরণ। এরকম জাতীয় সম্পদ ও তার উন্নয়ন নাগরিকদের গর্বিত এবং আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধীত স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচয় করে দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে বহির্বিশ্বে অবস্থান করা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এ একই দৃশ্য লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের উল্লিখিত দৃশ্যকল্প-১-এ। যেখানে সিয়াম কুয়াকাটা যাওয়ার পথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখে তার মন আনন্দে, ভরে গেল। উল্লেখ্য, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রটিও একটি সমষ্টিগত জাতীয় সম্পদের দৃষ্টান্ত।

সুতরাং আলোচনার আলোকে উদ্দীপকে যে সমষ্টিগত জাতীয় সম্পদের দৃশ্যকল্প প্রতিফলিত হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি

(ঘ) উদ্দীপকের জনাব রতনের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। হ্যাঁ, আমি মনে করি, জনাব রতনের দেশে প্রচলিত এ মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর।

বস্তুত ধনতন্ত্রের স্বেচ্ছাচার আর সমাজতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় একাধিপত্যের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপনের লক্ষ্যেই মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উদ্ভব। মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এ ব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের পারস্পরিক সহাবস্থান বিদ্যমান। মিশ্র অর্থনীতিতে উৎপাদনের যে অংশ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন, যে অংশে মুনাফা অর্জন উদ্দেশ্য নয়, বরং সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ সাধনই এর প্রধান উদ্দেশ্য। এ ব্যবস্থায় জনগণের ক্ষুদ্র একটি অংশ বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তা হয় এবং বাকি বৃহত্তর অংশই থাকে শ্রমিক বা মজুর। তবে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা সাধারণত ন্যায্য মজুরি পায়। ফলে আয়ের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়। যদিও

এ খাতের অংশ বিশেষেও শ্রমিক শোষণ পরিলক্ষিত হয়, তবুও ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের একঘেয়ে অর্থব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে মোটামুটি মানুষের জন্য কল্যাণকরই বলা যায়।

প্রশ্ন ৩। দৃশ্যকল্প-১: কাশেম মিয়া একটি হোটেলের মালিক। তার হোটেলে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় হোটেল ছেড়ে চলে যায়।

দৃশ্যকল্প-২: জিম-এর দেশে বেকার লোক নাই বললেই চলে। সেই দেশের সরকার প্রত্যেককে তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ। দেয়। প্রত্যেকের উপার্জন এক না হলেও কেউই তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয় না।

[রাজশাহী বোর্ড ২০২৩]

(ক) যাকাত কী?

(খ) জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য জনগণের সচেষ্ট থাকতে হবে কেন?

(গ) দৃশ্যকল্প-১ তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন অর্থব্যবস্থাকে প্রতিফলিত করেছে? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) তুমি কি মনে কর, জিম-এর দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শোষণহীন সমাজ গঠন সম্ভব? মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১ নং প্রশ্নের উত্তর:

(ক) ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির নিকট নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকলে তার একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র জনগণের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থাকে যাকাত বলে।

(খ) জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য জনগণকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ জাতীয় সম্পদের মালিক সরকারের পাশাপাশি সমষ্টিগতভাবে সকল নাগরিকও। জনগণের অর্থে জনগণের স্বার্থে সরকার এ সম্পদগুলোর উন্নয়ন করে থাকে। জনগণই এগুলো ব্যবহার করে, ভোগ করে। এগুলোর পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আর তাই সমষ্টিগত এ জাতীয় সম্পদের প্রতি সকল নাগরিকেরই বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

(গ) উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ আমার পাঠ্যবইয়ের ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি প্রতিফলিত হয়েছে।

কেননা, ধনতান্ত্রিক, অর্থব্যবস্থার প্রধান একটি বৈশিষ্ট্যই হলো শ্রমিক শোষণ। উৎপাদনের ব্যক্তিমালিকানার পাশাপাশি এ অর্থব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত মুনাফার মালিক ধনিক শ্রেণি অধিক লাভের আশায় শ্রমিকদের তার প্রাপ্য মজুরি প্রদান করেন না। এক শ্রমিক শোষণের মাধ্যমে একদিকে মালিকরা উৎপাদন ব্যয়

কম রাখছে, অন্যদিকে আবার উৎপাদনের উদ্বৃত্ত লাভ করছে। যার ফলে ধনী আরও ধনী হচ্ছে এবং গরিব আরও গরিবই থেকে যাচ্ছে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় এটি একটি বড় ত্রুটি। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১-এ শ্রমিক শোষণের এ চিত্রটিই প্রতিফলিত হয়েছে, যা আমার পাঠ্যবইয়ের ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে নির্দেশ করে।

(ঘ) উদ্দীপকের জিমের দেশে প্রচলিত অর্থব্যবস্থাটি হলো সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা। হ্যাঁ, আমি মনে করি, জিমের দেশে প্রচলিত এ অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

কেননা, এ অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় সকল উৎপাদন যন্ত্রের মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রই শ্রমিকের মজুরি প্রদান করে এবং উৎপাদনের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করে। ফলে ধনতন্ত্রের মতো পুঁজিপতি কর্তৃক শ্রমিককে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকে না। এ ব্যবস্থায় শ্রমিককে মজুরি প্রদানের মূলনীতি হলো-প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। এ ব্যবস্থায় বেকারত্ব থাকে না। কারণ রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিককে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার করে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তাই অপচয়ও কম হয়। এর ফলে জাতীয় উৎপাদনও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।

সুতরাং আলোচনার আলোকে উদ্দীপকের জিমের দেশের প্রচলিত সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে যে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

প্রশ্ন ৪। মায়া 'ক' দেশের নাগরিক। রাষ্ট্র তাকে তার যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয় এবং সব চাহিদা মেটায়। তিনি তার প্রাপ্য আয় থেকে বঞ্চিত হন না। অপরদিকে, স্মিথ 'খ' দেশের নাগরিক। তিনি একটি টুথপেস্ট কেনার জন্য দোকানে গেলে। দোকানদার তার কাছে বেশি দাম চাইলে সে পাশের দোকান থেকে দ্রব্যটি ক্রয় করেন।

[যশোর বোর্ড ২০২৩]

(ক) মূলধন কী?

(খ) জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ প্রয়োজন কেন?

(গ) 'ক' দেশে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) 'খ' দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে 'ক' দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর

১ নং প্রশ্নের উত্তর:

(ক) মূলধন হলো সেই ধরনের সম্পদ যা সরাসরি ভোগ করা হয় না কিন্তু যা কাজে লাগিয়ে অধিকতর উৎপাদন করা হয়।

(খ) কোনো দেশের সমৃদ্ধি নির্ভর করে সে দেশের জাতীয় সম্পদের প্রকৃতি ও পরিমাণের ওপর। যে দেশ জাতীয় সম্পদে যত সমৃদ্ধ সে দেশের উন্নতির সম্ভাবনা তত বেশি। তাই জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা 'আবশ্যক। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সম্পদের সম্মিলিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা, রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য অপরিহার্য।

(গ) উদ্দীপকে 'ক' দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এরূপ একটি অর্থব্যবস্থা যেখানে সম্পত্তির রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকে। সম্পদের ওপর কোনো রকম ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতন্ত্র হচ্ছে সমাজের অর্থনৈতিক সংগঠন। এ অর্থব্যবস্থায় সরকার দ্রব্য ও. সেবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌলিক সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদকের যেমন উৎপাদন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা নেই, তেমনি ভোগকারীর নিজ ইচ্ছামতো দ্রব্যসামগ্রী ভোগের সুযোগ নেই। আবার সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং জনগণের সর্বাধিক

কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। 'উদ্দীপকের মায়া 'ক' দেশের নাগরিক যেখানে রাষ্ট্র তার কাজের ব্যবস্থা করে দেয় এবং সব চাহিদা মেটায়। এবং তিনি তার প্রাপ্য আয় থেকে বঞ্চিত হন না। এসবই সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, 'ক' দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাই বিদ্যমান।

(ঘ) উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত 'খ' দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা এবং 'ক' দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান। নিচে ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো

ভিত্তি

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা

১. উৎপাদনের উপাদানসম্ হের মালিকানা

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উৎপাদনের উপাদানসমূহ যেমন-ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন ব্যক্তিমালিকানাধীন। ব্যক্তি তার নিজস্ব সম্পদ স্বাধীনভাবে ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। এক্ষেত্রে সম্পদের কোনোরকম ব্যক্তিমালিকানা থাকে না

২. উদ্যোগ গ্রহণ

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি এককভাবে বা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে যেকোনো দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করতে পারে

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের সকল উদ্যোগ সরকারিভাবে গৃহীত হয়।

৩. ভোক্তার 'স্বাধীনতা

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোগকারী কোন দ্রব্য কী পরিমাণে ক্রয় ও ভোগ করবে তা নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায়-ভোগকারীর নিজ ইচ্ছামতো দ্রব্যসামগ্রী ভোগের সুযোগ নেই

৪. শ্রমিক শোষণ

এ অর্থব্যবস্থায় শ্রমিকেরা প্রাপ্যের চেয়ে অনেক কম মজুরি পায়। তাই এখানে শ্রমিক শোষণ রয়েছে

এখানে মুনাফার মধ্যে পুরোটাই রাষ্ট্র বা সরকারের মালিকানায়। তাই শ্রমিক শোষণের প্রশ্নই ওঠে না।

 প্রশ্ন ৫। ঘটনা-১: জনাব 'R' একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উপকরণসমূহের জন্য তিনি ন্যায্যমূল্য পরিশোধ করেন না।

ঘটনা-২: জনাব 'Q' একটি দোকানের মালিক। তার দোকানে চালের কেজি ৫০ টাকা। পাশাপাশি সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ন্যায্য মূল্যের দোকানে একই চাল কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। [কুমিল্লা বোর্ড ২০২৩]

(ক) উপযোগ কী?

(খ) সমষ্টিগত সম্পদ কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়?

(গ) ঘটনা-১ দ্বারা কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ) ঘটনা-২ দ্বারা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে তার মিল আছে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

 

১ নং প্রশ্নের উত্তর:

(ক) কোনো দ্রব্য কর্তৃক মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে।

(খ) সমষ্টিগত সম্পদের মালিক রাষ্ট্র এবং জনগণ উভয়েই এবং এসব সম্পদ সংরক্ষণের নাগরিকদের যত্নশীল হতে হবে। সমষ্টিগত সম্পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাস্তাঘাট, সেতু, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ, বিমান, বনাঞ্চল, জলাশয় প্রভৃতি সবই সমষ্টিগত সম্পদ। এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হলে তার প্রভাব জনগণের ওপরই পড়ে প্রত্যক্ষভাবে। তাই সমষ্টিগত সম্পদ সংরক্ষণে রাষ্ট্রের পাশাপাশি জনগণকেও বিশেষ যত্নশীল ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

(গ) উদ্দীপকের 'ঘটনা-১' দ্বারা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রতিফলিত ঘটেছে।

বস্তুত অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে যে অর্থব্যবস্থায় চূড়ান্ত উদ্দেশ্য থাকে, সর্বাধিক মুনাফা লাভ করা ও যেখানে উৎপাদনের উপকরণসমূহে পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত থাকে তাকে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলে। এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসমূহ তথা ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন ব্যক্তিমালিকানায় থাকায়, উৎপাদনের উদ্যোগ বা 'বিনিয়োগ নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির ইচ্ছার ওপর। ব্যক্তি এক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উদ্যোগ থেকে সর্বাধিক আয় বা মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে।' ফলে উৎপাদনকারী এক্ষেত্রে অধিক মুনাফার আশায় শ্রমিক এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহে ন্যায্য মজুরি প্রদান করেন না। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় এটি একটি ত্রুটি। সুতরাং উদ্দীপকে বহুল আলোচিত এ ধনতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার প্রকৃতিই প্রতিফলিত হয়েছে।

(ঘ) উদ্দীপকের ঘটনা-২ এ প্রতিফলিত হয়েছে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার 'ন্যায্যমূল্য পণ্য' সেবাটি এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে এর মিল রয়েছে।

বাংলাদেশের বস্তুত মিশ্র অর্থনীতির চর্চা হয়। এখানে ব্যক্তিমালিকানা ও ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু কিছু খাতে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সরকারি মালিকানা, উদ্যোগ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকে। এ অর্থ ব্যবস্থায় ভোগকারী অবাধে সাধারণ দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগ করতে পারলেও বিশেষ অবস্থায় বা দুর্যোগকালীন সময়ে উৎপাদনের বিপর্যয় ঘটলে সরকার যেকোনো দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়ে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করতে পারে। যেমনটি লক্ষ করা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত রিলিফ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে সাধারণ দোকানে চালের মূল্য ৫০ টাকা কেজি হলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত ন্যায্যমূল্যের দোকানে তা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দেশের ক্রান্তিকালীন অথবা দুর্যোগকালীন সময়ে সরকার দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যা মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং বাংলাদেশে জনপ্রিয় এ মিশ্র অর্থব্যবস্থাটিই প্রচলিত রয়েছে।

সুতরাং আলোচনার আলোকে উদ্দীপকের 'ঘটনা-২' এ যে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে এবং তার সাথে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মিল রয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

প্রশ্ন ৬। দৃশ্য-১: গোলাপ 'ক' দেশে বাস করেন। তিনি দুটি কারখানার মালিক। তিনি শ্রমিকদের ঠিকমতো বেতন প্রদান করেন। তিনি লভ্যাংশ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গরিবদের বিতরণ করেন।

দৃশ্য-২: মি. রফিক একটি মুসলিম দেশে বাস করেন। তিনি তার দেশে কিছু কারখানার মালিক। তিনি নিজের ইচ্ছামতো ব্যবসায় পরিচালনা করেন এবং সরকার ব্যবসায়ে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু তার বন্ধু রাজ্জাক অন্য একটি দেশে বাস করেন এবং তিনি নিজের ইচ্ছামতো ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন না। ব্যবসায় পরিচালনায় তাকে সরকারের নিয়মনীতি কঠোরভাবে পালন করতে হয়।

(ক) অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে?

(খ) আমরা জাতীয় সম্পদ কীভাবে সংরক্ষণ করতে পারি?

(গ) দৃশ্যকল্প-১-এ কোন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) মি. রফিক ও রাজ্জাকের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে কোন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উত্তম? যুক্তি দাও।

[চট্টগ্রাম বোর্ড ২০২৩]

১ নং প্রশ্নের উত্তর:

(ক) যে পদ্ধতি, প্রক্রিয়া এবং নিয়মনীতির আওতায় কোনো দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয়, তাকেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

(খ) জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রীয় যেসব ব্যবস্থা আছে, সেগুলো যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- সেতু, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, খেলার মাঠ ইত্যাদি কোনো সময় অরক্ষিত না রাখা। জাতীয় সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার রোধে আমাদেরকে সর্বদা সচেতন ও সচেষ্ট থাকতে হবে। যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি অপ্রয়োজনে খরচ না করা। জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধে আমাদেরকে প্রতিটি বিষয়ে সচেতন ও সচেষ্ট থাকতে হবে। এভাবেই আমরা আমাদের জাতীয় সম্পদের অপচয় রোধ ও সংরক্ষণ করতে পারি।

(গ) দৃশ্যকল্প-১ এ প্রতিফলিত অর্থব্যবস্থা হলো ইসলামি অর্থব্যবস্থা। যে অর্থব্যবস্থা ইসলামের নিয়মনীতি মেনে পরিচালিত হয় তাকে ইসলামি অর্থব্যবস্থা বলে। ইসলামি অর্থব্যবস্থা কোরআন ও হাদিসের আলোকে পরিচালিত হয় এবং এর চরম ও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো সর্বাধিক মানবকল্যাণ সাধন করা। এতে মানবজীবনের সাথে সম্পর্কিত সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার এক সুসংহত দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত বিভিন্ন বস্তু সামগ্রী ও পরিবেশ-প্রকৃতি ব্যবহার করে ইসলামি শরিয়তের আলোকে অধিকতর সম্পদ সৃষ্টি ও ভোগ করবে এটাই ইসলামের বিধান এবং ইসলামি অর্থব্যবস্থার মূলকথা। এ অর্থব্যবস্থায় ধনতন্ত্রের ন্যায় সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত হলেও যাকাতভিত্তিক হওয়ায় এতে শ্রেণিবৈষম্য ও শ্রমিক শোষণের স্থান নেই। এছাড়া এ ব্যবস্থার বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে হালালকে প্রাধান্য ও হারামকে পরিত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকের গোলাপ দুটি কারখানার মালিক এবং তিনি শ্রমিকদের ঠিকমত বেতন প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি লভ্যাংশ হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গরিবদের বিতরণ করেন। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ঠিকমত বেতন প্রদান করা ও গরিবদের নির্দিষ্ট অর্থ বিতরণ করা তার দেশের অর্থনীতিকে শ্রমিক শোষণের

অর্থনীতি তথা ধনতন্ত্র থেকে পৃথক করেছে। উক্ত বৈশিষ্ট্যদ্বয় কেবল ইসলামি অর্থব্যবস্থাতেই বিদ্যমান থাকায় নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, 'ক' দেশের ইসলামি অর্থব্যবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে

ঘ) মি. রফিক ও রাজ্জাকের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আমি রাজ্জাকের দেশের অর্থনীতিকে উত্তম মনে করি।

মি. রফিক ও রাজ্জাকের দেশে যথাক্রমে ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। আর এ দুধরনের অর্থব্যবস্থার মধ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো বলে আমি মনে করি। কেননা সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্রই শ্রমিকের মজুরি প্রদান করে এবং উৎপাদনের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করে। ফলে ধনতন্ত্রের মতো পুঁজিপতি কর্তৃক শ্রমিককে বঞ্চিত করার সুযোগ এখানে থাকে না। এখানে শ্রমিকের মজুরি প্রদানের মূলনীতি হলো-'প্রত্যেকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে।' এ ব্যবস্থায় বেকারত্ব থাকে না। কারণ রাষ্ট্র প্রত্যেকের সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। সকলের আয় এক নয়। কিন্তু কেউ উৎপাদনে তার অবদান অনুসারে প্রাপ্য আয় থেকে বঞ্চিত হয় না। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে অর্জিত সম্পদের সুষম বণ্টন হয়। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আয় বৈষম্য ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার আয় বৈষম্যের চেয়ে কম। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার আওতায় রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হয়। তাই সম্পদের অপচয়ও অপেক্ষাকৃত কম হয়। ফলে মোট জাতীয় উৎপাদনও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায় এবং সম্পদের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।

পরিশেষে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রাজ্জাকের দেশে বিদ্যমান সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাই তুলনামূলকভাবে ভালো।

প্র্যাকটিস

প্রশ্ন ১। জনাব রহিম ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাজার থেকে বিভিন্ন আকৃতির কাঠ কেনেন। তিনি সেগুলো এলাকার কিছু লোক নিয়ে বসার টুল, রুটি বানানোর বেলুন, চেয়ার ইত্যাদি তৈরি করেন। অতঃপর সেগুলো রঙ করে বাজারের একটি ভাড়া করা দোকানে নিয়ে বিক্রি করেন। বিক্রির আয় থেকে দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেও তার ভালো লাভ থাকে। তার কাজে কর্মচারীসহ সকলে খুশি।

(ক) উপযোগ কাকে বলে?

(খ) অপ্রাচুর্য ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।

(গ) অর্থনীতিতে রহিমের কাজকে কী বলে? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) তুমি কি মনে কর, জনাব রহিমের কাজে উপাদানসমূহের আয় বণ্টন যথাযথ হয়েছে? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও

ঘ) তুমি কি মনে কর, জনাব রহিমের কাজে উপাদানসমূহের আয় বণ্টন যথাযথ হয়েছে? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও

প্রশ্ন ২। 'X' দেশের জনগণের বড় অংশ সুবিধাবঞ্চিত থাকে। তাদের আয় কম এবং চাহিদা কম। কারণ তাদের ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বাজারের দাম দ্বারা নির্ধারিত হয়।

অন্যদিকে 'Y' দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আয়কর থাকলেও ধনীদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশের তারা দাবিদার হয়। উৎপাদনকারীগণ তাদের) মুনাফা থেকে আনুপাতিক অংশ পুঁজিপতিদের সরবরাহ করেন।

(ক) মুনাফা কী?

(খ) সমুদ্রের পানি সম্পদ নয় কেন?

(গ) 'X' দেশের অর্থব্যবস্থার ব্যাখ্যা দাও।

(ঘ) বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থার সাথে 'Y' দেশের অর্থব্যবস্থার সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

প্রশ্ন ৩। সুমন একজন সৎ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি গরুর খামার ও মাছ চাষ করেন। বর্তমানে তিনি অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। তার সংসারে কোনো অভাব নেই। অপরপক্ষে, তার ভাই রতন নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। যখন নদীতে মাছ পাওয়া যায় না তখন তিনি বন থেকে মধু সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। তার সংসারও ভালোভাবে চলে।

(ক) উপযোগ কী?

(খ) সম্পদের অপ্রাচুর্য বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।

(গ) উদ্দীপকে সুমনের কর্মকান্ডে কোন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) উদ্দীপকে রতনের আয়ের উৎসগুলো কোন ধরনের সম্পদের অন্তর্ভুক্ত? উক্ত সম্পদ সংরক্ষণ ও অপচয় রোধে তুমি কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? তোমার মতামত দাও।

প্রশ্ন ৪। মি. আমিন টাঙ্গাইল জেলার একজন সরকারি কর্মচারী। একদিন তিনি দেখতে পান যে, দুই-তিনজন লোক অবৈধভাবে বনের গাছ কাটছে। মি. আমিন তখনই গ্রামবাসীর সহায়তায় গাছ কাটা বন্ধ করেন।

(ক) নিসাব কী?

(খ) পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।

(গ) মি. আমিন কোন ধরনের সম্পদ রক্ষা করেছেন? ব্যাখ্যা কর।

ঘ) তুমি কি মনে কর, মি. আমিনের কাজটি উক্ত সম্পদ রক্ষার জন্য যথেষ্ট? তোমার মতামত দাও দাও।

প্রশ্ন ৫। 'ক' দেশ- উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে উৎপাদকের স্বাধীনতা নেই। ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের সুযোগ নেই।

'খ' দেশ- উৎপাদন বণ্টন ও ভোগ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হলেও সরকারি নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান। মুনাফা অর্জনই প্রধান লক্ষ্য।

(ক) মূলধন কী?

(খ) মোট দেশজ উৎপাদন বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।

(গ) 'ক' দেশে কী ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত দুটি দেশের মধ্যে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নাবলি

প্রশ্ন ১। ব্যক্তিগত সম্পদ কী? [ঢা. বো. '২৪; কু. বো, '২০]

উত্তর: ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গাজমি, বাড়িঘর, কলকারখানা, অর্থসম্পদ, গাড়ি, দ্রব্যসামগ্রী ইত্যাদি ব্যক্তিগত সম্পদ।

প্রশ্ন ২। সম্পদ কাকে বলে? [ম. বো. '২০. '২৩]

উত্তর: যেসব দ্রব্যের উপযোগ রয়েছে, যোগান চাহিদার তুলনায় সীমাবদ্ধ, যা হস্তান্তরযোগ্য এবং বাহ্যিক সত্তার অধিকারী তাকেই সম্পদ বলে।

প্রশ্ন ৩। উপযোগ কী?

[ঢা, বো, '২৩, '১৯, ১৭; রা. বো. '২৪, '২৩, '১৯, '১৭, '১৫; য, বো. '২০; কু. বো. '২৩, '১৬, '১৫; সি. বো. '২০; ব. বো. '২৪, '২৩, '২০, '১৯, '১৫; দি. বো. '২০; সকল বোর্ড '১৮]

অথবা, উপযোগ ধারণাটি লেখ।

[সকল বোর্ড '১৮; ঢা. বো. '১৭; রা. বো. '১৭, '১৫; কু. বো. '১৬, '১৫' সি. বো. '২৩; ব. বো. '১৫]

উত্তর: কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাই হলো উপযোগ।

প্রশ্ন ৪। জাতীয় সম্পদের উৎস কয়টি? [য. বো.'১৫; চ. বো. '১৫, '১৭]

উত্তর: জাতীয় সম্পদের উৎস দুটি।

প্রশ্ন ৫। সম্পদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? [সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা]

উত্তর: সম্পদকে ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এ পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

প্রশ্ন ৬। বিনিয়োগ কাকে বলে? [পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়]

উত্তর: বিদ্যমান মূলধন সামগ্রীর সাথে নতুন মূলধন যুক্ত হওয়াকে বিনিয়োগ বলে।

প্রশ্ন ৭। অপ্রাচুর্য বলতে কী বোঝ? [রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

উত্তর: কোনো বস্তুর চাহিদার তুলনায় যোগানের সীমাবদ্ধতাকে অপ্রাচুর্য বলে।

প্রশ্ন ৮। বাহ্যিকতা, বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: বাহ্যিকতা বলতে বস্তুটি দৃশ্যমান বোঝায়।

প্রশ্ন ৯। হস্তান্তরযোগ্যতা কী?

উত্তর: হস্তান্তরযোগ্যতা হচ্ছে একজনের নিকট হতে অন্যজনের পাওয়ার সম্ভাব্যতা।

প্রশ্ন ১০। সমষ্টিগত সম্পদ কী?

উত্তর: সমাজের সকলে সম্মিলিতভাবে যেসব সম্পদ ভোগ করে তাকে সমষ্টিগত সম্পদ বলে।

প্রশ্ন ১১। জাতীয় সম্পদের প্রথম উৎসটি কী?

উত্তর: জাতীয় সম্পদের প্রথম উৎসটি প্রকৃতিপ্রদত্ত।

প্রশ্ন ১২। জাতীয় সম্পদের দ্বিতীয় উৎসটি কী?

উত্তর: জাতীয় সম্পদের দ্বিতীয় উৎসটি মানবসৃষ্ট।

প্রশ্ন ১৩। সংরক্ষণ কাকে বলে?

উত্তর: কোনো বন্ধু, দ্রব্য, প্রতিষ্ঠান, সম্পত্তি বিশেষ যত্নসহকারে রক্ষা করা ও তার তত্ত্বাবধান করাকে সংরক্ষণ বলে।

প্রশ্ন ১৪। জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ বলতে ব্যক্তিগত সম্পদ ও সমষ্টিগত সম্পদ উভয়েরই সংরক্ষণ বোঝায়।

প্রশ্ন ১৫। জাতীয় সম্পদ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পদ এবং সমাজের সমষ্টিগত সম্পদকে একত্রে জাতীয় সম্পদ বলে।

প্রশ্ন ১৬। সমষ্টিগত সম্পদের অধিকারী কারা?

উত্তর: রাষ্ট্র ও জনগণ সম্মিলিতভাবে সমষ্টিগত সম্পদের অধিকারী।

প্রশ্ন ১৭। বনাঞ্চল কোন ধরনের সম্পদ?

উত্তর: বনাঞ্চল সমষ্টিগত সম্পদ।

প্রশ্ন ১৮। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ? [চ. বো. '২৩]

উত্তর: যে পদ্ধতি, প্রক্রিয়া এবং নিয়মনীতির আওতায় কোনো দেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় তাই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

প্রশ্ন ১৯। ভূমির মালিককে কী দেওয়া হয়?

উত্তর: ভূমির মালিককে খাজনা দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ২০। সাধারণ অর্থে ভূমি বলতে কাকে বোঝায়?

উত্তর: সাধারণ অর্থে ভূমি বলতে জমিকে বোঝায়।

প্রশ্ন ২১ বর্তমান বিশ্বে কয় ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর আছে?

উত্তর: বর্তমান বিশ্বে চার ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কার্যকর আছে।

প্রশ্ন ২২। সংগঠন কাকে বলে? [য. বো. '২৪; চ. বো. '২০]

উত্তর: উৎপাদনের তিনটি উপকরণ, ভূমি, শ্রম ও মূলধনকে সমন্বিত করে উৎপাদন কার্য পরিচালনা ও সম্পাদন করাকে সংগঠন বলে।

প্রশ্ন ২৩। শ্রম কী? [ঢা. বো. '২০; কু. বো. '২৪]

উত্তর: উৎপাদন কাজে ব্যবহারযোগ্য মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতাই হলো শ্রম।

প্রশ্ন ২৪। মূলধন কী? [য. বো. ২৩]

উত্তর: মূলধন হলো সেই ধরনের সম্পদ যা সরাসরি ভোগ করা হয় না কিন্তু যা কাজে লাগিয়ে অধিকতর উৎপাদন করা হয়।

প্রশ্ন ২৫। মুনাফা কী? [সি. বো, '২৩]

উত্তর: উৎপাদন কাজে নিয়োজিত বিনিয়োগের ফলে অর্জিত আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যে উদ্বৃত্ত থাকে তাকে মুনাফা বলে।

প্রশ্ন ২৬। উদ্যোক্তা কাকে বলে? [দি. বো. ১৯]

উত্তর: ভূমি, শ্রম ও মূলধনকে সমন্বিত করে যিনি উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন তাকে উদ্যোক্তা বলে।

প্রশ্ন ২৭। ভোগ কাকে বলে? [ঢা. বো, '১৭; রা. বো. '১৭; চ. বো. ১৫]

উত্তর: মানুষের অভাব পূরণের জন্য কোনো দ্রব্যের উপযোগ ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে/ক্ষমতাকে ভোগ বলে।

প্রশ্ন ২৮। অভাবকী? [সি. বো. '১৭; য. বো. '১৫; চ. বো. '১৫]

উত্তর: কোনো বস্তুগত বা অবস্তুগত দ্রব্যের জন্য অনুভূত প্রয়োজনই অভাব।

প্রশ্ন ২৯। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় মুনাফা কে গ্রহণ করে?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় বিনিয়োগকারী মুনাফা গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ৩০। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তার স্বাধীনতা কীরূপ?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

প্রশ্ন ৩১। কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তিমালিকানাধীন?

উত্তর : ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ ব্যক্তিমালিকানাধীন।

প্রশ্ন ৩২। অবাধ প্রতিযোগিতা কোন অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য?

উত্তর: অবাধ প্রতিযোগিতা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য।

প্রশ্ন ৩৩। ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোন উদ্দেশ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন ৩৪। কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শোষণ বিদ্যমান?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শোষণ বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৩৫। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন উপকরণসহ সকল সম্পদের মালিক কে?

উত্তর: সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন।

প্রশ্ন ৩৬। সমাজতন্ত্র কী?

উত্তর: সমাজতন্ত্র হচ্ছে 'সমাজের অর্থনৈতিক সংগঠন।

প্রশ্ন ৩৭। কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বীকৃত নয়?

উত্তর: সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত নয়।

প্রশ্ন ৩৮। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্জিত মুনাফার মালিক কে?

উত্তর: সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় অর্জিত মুনাফার মালিক রাষ্ট্র বা সরকার।

প্রশ্ন ৩৯। কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বেকারত্ব থাকে না?

উত্তর: সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বেকারত্ব থাকে না।

প্রশ্ন ৪০। বাংলাদেশে কোন ধরনের অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।

উত্তর: বাংলাদেশে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৪১। ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমন্বয়ে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে?

উত্তর: ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমন্বয়ে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে।

প্রশ্ন ৪২। কোন অর্থনীতিতে সম্পদ বা আয়ের আংশিক সুষ্ঠু বণ্টন ঘটে?

উত্তর: মিশ্র অর্থনীতিতে সম্পদ বা আয়ের আংশিক সুষ্ঠু বণ্টন ঘটে।

প্রশ্ন ৪৩। যাকাত কী? [রা. বো, '২৩]

উত্তর: ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তির নিকট নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকলে তার একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র জনগণের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থাকে যাকাত বলে।

প্রশ্ন ৪৪। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিক কে?

উত্তর: ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সম্পদের মালিক ব্যক্তিবর্গ।

প্রশ্ন ৪৫। নিসাব কাকে বলে?

উত্তর: ন্যূনতম যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয় তাকে ইসলামি পরিভাষায় নিসাব বলে।

প্রশ্ন ৪৬। প্রাচীন বাংলায় এবং মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে প্রধানত কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল?

উত্তর: প্রাচীন বাংলায় এবং মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে প্রধানত সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

প্রশ্ন ৪৭। সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কেমন ছিল?

উত্তর: সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভূস্বামীকেন্দ্রিক ছিল।

প্রশ্ন ৪৮। ব্রিটিশ শাসনামলে ভূস্বামীদের কী বলা হতো?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনামলে ভূস্বামীদের বলা হতো জমিদার।

প্রশ্ন ৪৯। কোন আমলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়?

উত্তর: পাকিস্তান আমলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়।

প্রশ্ন ৫০। কোন খাত ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে?

উত্তর: বেসরকারি খাত ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্নাবলি

প্রশ্ন ১। সূর্যের আলো সম্পদ নয় কেন? [ঢা. বো. '২৩]

উত্তর: অর্থনীতিতে 'সূর্যের আলো' সম্পদ নয়। কারণ এর মাঝে সম্পদের বৈশিষ্ট্যসমূহের উপস্থিতি নেই। প্রকৃত অর্থে কোনো বস্তু বা দ্রব্যকে সম্পদ বলতে হলে সে বস্তুর উপযোগ, অপ্রাচুর্য, বাহ্যিকতা এবং হস্তান্তরযোগ্যতা থাকতে হবে। 'সূর্যের আলো' এর মাঝে সম্পদের সকল বৈশিষ্ট্য না থাকায় এটি সম্পদ নয়।

প্রশ্ন ২। ফ্যানের বাতাস সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় কেন? [রা. বো. '২৩]

উত্তর: সম্পদ হওয়ার সকল বৈশিষ্ট্য (উপযোগ, অপ্রাচুর্য, বাহ্যিকতা ও হস্তান্তরযোগ্যতা) ফ্যানের বাতাসে বিদ্যমান বলে ফ্যানের বাতাসকে সম্পদ বলা হয়।

প্রকৃতির বাতাস প্রকৃতিতে অফুরন্ত পাওয়া যায়, অর্থাৎ প্রকৃতির বাতাসের অপ্রাচুর্য নেই তাই প্রকৃতির বাতাস সম্পদ নয়। কিন্তু ফ্যানের বাতাস পাওয়ার জন্য মানুষকে অর্থ ব্যয় করতে হয় তাই ফ্যানের বাতাসের অপ্রাচুর্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর সাথে ফ্যানের বাতাসের সম্পদের সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তাই ফ্যানের বাতাস সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রশ্ন ৩। সমুদ্রের পানি সম্পদ নয় কেন? [সি. বো. '২৩]

উত্তর: সমুদ্রের পানি সম্পদ নয়। কারণ, এর মধ্যে সম্পদের সবগুলো বৈশিষ্ট্য উপস্থিত নেই। কোনো বস্তু সম্পদ হতে হলে তার থাকতে হবে উপযোগ, অপ্রতুলতা, বাহ্যিকতা এবং হস্তান্তর যোগ্যতা। কিন্তু সমুদ্রের পানির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এ বৈশিষ্ট্যসমূহের সবগুলো উপস্থিত না থাকায় অর্থনীতিতে তা সম্পদ নয়।

প্রশ্ন ৪। "পরিমিত সরবরাহ সম্পদের পূর্বশর্ত" ব্যাখ্যা কর। [সি, বো. '২০]

উত্তর: কোনো দ্রব্য বা সেবার চাহিদার যোগান বা সরবরাহের পরিমাণ কম হলে দ্রব্যটির অপ্রাচুর্য দেখা যায়। যেমন-নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মানুষের প্রতিমুহূর্তেই বাতাসের প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃতিতে বাতাস অফুরন্ত হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় এর সরবরাহ বেশি। তাই বাতাসের জন্য মানুষকে কোনো দাম দিতে হয় না। অর্থাৎ বাতাসের অপ্রাচুর্য নেই। এ কারণে বলা যায়, পরিমিত সরবরাহ সম্পদের পূর্বশর্ত।

প্রশ্ন ৫। অপ্রাচুর্য বলতে কী বোঝ? [ঢা. বো. '১৭: রা. যো, '১৫; সি. বো, '২৩; ব. বো. '২৩]

উত্তর: যেকোনো একটি দ্রব্যের সরবরাহ এর চাহিদার তুলনায় কম হলে দ্রব্যটির অপ্রাচুর্যতা দেখা দেয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, খাদ্য একটি দ্রব্য। যেকোনো দেশে যেকোনো সময়ে খাদ্যের সরবরাহ এর চাহিদার তুলনায় কম। সেই জন্য খাদ্য পেতে হলে এর দাম পরিশোধ করতে হয়। এটিই হলো খাদ্যের অপ্রাচুর্য।

প্রশ্ন ৬। কেন মূলধনকে উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান বলা হয়?

উত্তর: মূলধনকে উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান বলা হয়।

কারণ, এটি নিজেও একটি উৎপাদিত সম্পদ, যা পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য দ্রব্য উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া উৎপাদিত আয়ের একটি অংশ পুনরায় মূলধন বৃদ্ধিতে বা নতুন যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, যা ভবিষ্যতে আরও উৎপাদন করতে সহায়ক হয়। এজন্য মূলধনকে উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান বলা হয়।

প্রশ্ন ৭। জাতীয় সম্পদের উৎস দুটি বর্ণনা দাও। [ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা।

উত্তর: জাতীয় সম্পদের উৎস দুটি হলো প্রকৃতিপ্রদত্ত ও মানবসৃষ্ট। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বনের গাছপালা, ফলমূল, প্রাণী ও পাখিকুল, নদ-নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয় এবং এগুলোর মৎস্য সম্পদ, অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ, ভূমির অভ্যন্তরস্থ পানি ও সকল রকম খনিজ সম্পদ এসবই প্রকৃতিপ্রদত্ত জাতীয় সম্পদ। কোনো দেশের অধিবাসীরা তাদের শ্রম ও মূলধনের সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার, সংগ্রহ ও উত্তোলন করে। সেগুলোর রূপান্তর বা স্থানান্তর করে যেসব নতুন সম্পদ সৃষ্টি করে সেগুলোই মানবসৃষ্ট জাতীয় সম্পদ।

প্রশ্ন ৯। বিভিন্ন প্রকার সম্পদের সংজ্ঞা দাও।

উত্তর: সম্পদকে ব্যক্তিগত, একান্ত ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এই পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। ব্যক্তিগত 'মালিকানাধীন জায়গা, জমি, বাড়িঘর, কলকারখানা, অর্থসম্পদ, গাড়ি, দ্রব্যসামগ্রী ইত্যাদি ব্যক্তিগত সম্পদ। সকলে সম্মিলিতভাবে যেসব সম্পদ ভোগ করে, সেগুলো সমষ্টিগত সম্পদ। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক ব্যক্তিগত সম্পদ এবং সমাজের সমষ্টিগত সম্পদকে একত্রে জাতীয় সম্পদ বলে। আবার কিছু সম্পদ আছে যেগুলো বিশ্বের সকল জাতিই ভোগ করতে পারে  সেগুলো আন্তর্জাতিক সম্পদ।

প্রশ্ন ১০। জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য জনগণের সচেষ্ট থাকতে হবে কেন? [রা. বো. '২৩]

উত্তর: জাতীয় সম্পদের উন্নয়ন ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য জনগণকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ জাতীয় সম্পদের মালিক সরকারের পাশাপাশি সমষ্টিগতভাবে সকল নাগরিকও। জনগণের অর্থে জনগণের স্বার্থে সরকার এ সম্পদগুলোর উন্নয়ন করে থাকে। জনগণই এগুলো ব্যবহার করে, ভোগ করে। এগুলোর পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আর তাই সমষ্টিগত এ জাতীয় সম্পদের প্রতি সকল নাগরিকেরই বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

প্রশ্ন ১১। জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ প্রয়োজন কেন? [য, বো. '২৩; কু. বো, '২০; চ. বো, '২০; সি. বো, '১৯; ব. বো. ২৪]

উত্তর: কোনো দেশের সমৃদ্ধি নির্ভর করে সে দেশের জাতীয় সম্পদের প্রকৃতি ও পরিমাণের ওপর। যে দেশ জাতীয় সম্পদে যত সমৃদ্ধ সে দেশের উন্নতির সম্ভাবনা তত বেশি। তাই জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা আবশ্যক। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সম্পদের সম্মিলিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা, রাষ্ট্র ও জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য অপরিহার্য।

প্রশ্ন ১২। সমষ্টিগত সম্পদ কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়?[কু. বো. '২৩]

উত্তর: সমষ্টিগত সম্পদের মালিক রাষ্ট্র এবং জনগণ উভয়েই এবং এসব সম্পদ সংরক্ষণের নাগরিকদের যত্নশীল হতে হবে। সমষ্টিগত। সম্পদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাস্তাঘাট, সেতু, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ, বিমান, বনাঞ্চল,

জলাশয় প্রভৃতি সবই সমষ্টিগত সম্পদ। এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হলে তার প্রভাব জনগণের ওপরই পড়ে প্রত্যক্ষভাবে। তাই সমষ্টিগত সম্পদ সংরক্ষণে রাষ্ট্রের পাশাপাশি জনগণকেও বিশেষ যত্নশীল ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রশ্ন ১৩। আমরা সম্পদের অপচয়রোধ করব কেন? [য. বো. ১৯]

উত্তর: কোনো দেশের সমৃদ্ধি নির্ভর করে সে দেশের জাতীয় সম্পদের প্রকৃতি ও পরিমাপের ওপর। একটি দেশের সকল নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পদ ও সমষ্টিগত সম্পদ একত্রে জাতীয় সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়। সম্পদ আমাদের ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগে। তাই আমরা সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করব এবং সম্পদের অপচয় রোধে বিরত থাকব।

প্রশ্ন ১৪। উৎপাদনের উপকরণ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: উৎপাদনের উপকরণ বলতে সেই সমস্ত সম্পদ বা উপাদানকে বোঝায়, যা ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদনের জন্য চারটি উপাদান আবশ্যক। যথা-ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন। ভূমি বলতে সকল প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- জমি, জমির উপস্থিতি এবং অভ্যন্তরের সকল কিছুকে বোঝায়। উৎপাদন কাজে ব্যবহারযোগ্য মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতাকে শ্রম এবং উৎপাদিত উপাদানকে মূলধন বলে। আর উৎপাদনের তিনটি উপকরণ। যথা- ভূমি, শ্রম ও মূলধনকে সমন্বিত করে উৎপাদনকার্য পরিচালনা ও সম্পাদন করাকে বলে সংগঠন। এ চারটি উপাদান একত্রে কাজ করে কোনো একটি পণ্য বা সেবা তৈরি করে।

প্রশ্ন ১৫। "সংগঠন হলো একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া"- ব্যাখ্যা কর। [রা. বো. '১৯]

উত্তর: যেকোনো কাজের পরিকল্পনা করার পর ব্যবস্থাপকের কাজ হলো তা বাস্তবায়ন করা। আর এজন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের বস্তুগত ও অবস্তুগত উপকরণ। এ উপকরণগুলো সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হবে, যা একজনের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যেসব কাজ করা প্রয়োজন তা চিহ্নিত করে বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করে দক্ষ লোকদের বুঝিয়ে দিতে হয়। তাই বলা যায়, সংগঠন হলো একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন ১৬। মূলধন বলতে কী বোঝায়? [সকল বোর্ড '১৮]

উত্তর: উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদানকে মূলধন বলে। মূলধন হলো সেই ধরনের সম্পদ যা সরাসরি ভোগ করা হয় না কিন্তু যা কাজে লাগিয়ে অধিকতর উৎপাদন করা হয়। যেমন- যন্ত্রপাতি, - কলকারখানা, উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত ভবন, অর্থ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৭। সংগঠন বলতে কী বোঝায়? [সি. বো. '১৭]

উত্তর: সংগঠন বলতে ভূমি, শ্রম, মূলধন ইত্যাদি উপকরণের মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয় ঘটিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করাকে বোঝায়। অর্থাৎ একজন উদ্যোক্তার বিভিন্ন কাজ, যেমন কোনো কিছু উৎপাদনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, ভূমি, শ্রম, মূলধন একত্রীকরণ ও তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করাই সংগঠন।

প্রশ্ন ১৮। উদ্যোক্তা বলতে কী বোঝায়? [দি. যো.'১৫]

উত্তর: উৎপাদনের তিনটি উপকরণ। যথা- ভূমি, শ্রম ও মূলধনকে সমন্বিত করে উৎপাদনকার্য পরিচালনা ও সম্পাদনা করাকে বলা হয় সংগঠন। আর যিনি সংগঠনের এ কাজটি করেন তাকেই বলা হয় উদ্যোক্তা। উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা রয়েছে, উদ্যোক্তা তা বহন করেন। আবার সমস্ত উদ্যোগ থেকে যে লাভ আসে, তাও তারই প্রাপ্য।

প্রশ্ন ১৯। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রে 'অবাধ প্রতিযোগিতা' শব্দটি ব্যাখ্যা কর।

[রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা]

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অবাধ প্রতিযোগিতা। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে পারে। তাই বাজারে একই দ্রব্যের বহুসংখ্যক উৎপাদক থাকে এবং তাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা থাকে। উৎপাদক বা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়।

প্রশ্ন ২০। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। [সামসুল হক খান স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা]

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

১. ভোন্তার স্বাধীনতা: ভোগকারী কোন দ্রব্য কী পরিমাণে ক্রয় ও ভোগ করবে, এ বিষয়ে সে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে তার পছন্দ, আয় ও দ্রব্যের বাজার মূল্যের দ্বারা তার এ সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়।

২. সর্বাধিক মুনাফা অর্জন: ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। যেসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে মুনাফার সম্ভাবনা বেশি, উৎপাদনকারীরা সেসব দ্রব্যেই বেশি বিনিয়োগ করে।

প্রশ্ন ২১। ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ? [ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুল, যশোর]

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে উৎপাদনের উপাদানসমূহ যথা- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন ব্যক্তিমালিকানায় থাকে। অর্থাৎ ব্যক্তি তার সম্পদ/ আয়ের সাহায্যে ভূমির মালিকানা অর্জন করতে পারে, শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারে, মূলধন বা পুঁজি গঠন করতে পারে। ব্যক্তি তার নিজস্ব সম্পদ স্বাধীনভাবে ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারে। এজন্য ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে অনেক সময় মুক্তবাজার অর্থনীতি বলা হয়। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দ্রব্যের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ সবই বাজারে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন ২২। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি এককভাবে বা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে যেকোনো দ্রব্য/সেবা উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারে। এক্ষেত্রে কোনোরকম বাধানিষেধ নেই। এ ব্যবস্থায় প্রায় সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিকে অনেক সময় মুক্তবাজার অর্থনীতি বলা হয়। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দ্রব্যের উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ সবই বাজারে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা এবং উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই বললেই চলে।

প্রশ্ন ২৩। শোষণহীন উৎপাদন ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়? [দি. বো. '২০]

উত্তর: শোষণহীন উৎপাদন ব্যবস্থা বলতে সে ব্যবস্থাকেই বোঝায় যে ব্যবস্থায় উৎপাদন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক নিয়ে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্মত খাদ্য উৎপাদন করে। প্রচলিত অর্থব্যবস্থাগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শোষণহীন উৎপাদন ব্যবস্থা বিদ্যমান। এ অর্থব্যবস্থায় পুঁজিপতি কর্তৃক উৎপাদন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ থাকে না।

প্রশ্ন ২৪। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদনসমূহের মালিকানা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণসহ সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। সম্পদের ওপর কোনো রকম ব্যক্তিমালিকানা থাকে না। সমাজতন্ত্র হচ্ছে 'সমাজের অর্থনৈতিক সংগঠন।' এ সংগঠনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র উৎপাদনের চারটি উপাদানকে সমন্বিত করে একটি সার্বিক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে উৎপাদন কার্যের নির্দেশনা দেয় ও তা পরিচালনা করে। সমাজের সকল সদস্য এ পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সর্বাধিক কল্যাণ অর্জন করবে-এটিই সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ২৫। মিশ্র অর্থব্যবস্থার বেসরকারি ও সরকারি খাতের  সহাবস্থান ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তিমালিকানা ও ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি কিছু কিছু খাতে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সরকারি

মালিকানা, উদ্যোগ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকে। জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য ও সেবা যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষার আয়োজন এসব প্রধানত সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। তবে এক্ষেত্রেও আংশিক ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগে উৎপাদন ও সরবরাহ দেখা যায়। এছাড়া মৌলিক ও বৃহদায়তন শিল্প, জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রধান আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, শিশুখাদ্য এসবও সাধারণত সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে। আবার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগপণ্য; যেমন- কৃষিপণ্য, কাপড় ও তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াকৃত খাদ্যদ্রব্য, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ব্যক্তিগত যানবাহন ইত্যাদি প্রধানত ব্যক্তিগত উদ্যোগে উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়।

প্রশ্ন ২৬। ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়? [কু. বো.'১৫]

উত্তর: ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এরূপ এক ব্যবস্থা, যেখানে অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূলভিত্তি হলো ইসলামি শরিয়তের অনুশাসন। এখানে কুরআন-সুন্নাহের অনুসারে অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হয়। ইসলামি অর্থনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো শোষণমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে সুদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামি অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত, তবে জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ২৭। ইসলামি অর্থব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ইসলামি অর্থব্যবস্থার মূল কথা হলো পবিত্র কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী অর্থব্যবস্থা চলবে। ইসলামি অর্থব্যবস্থা মানুষের জীবনের সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করে। এ অর্থব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ও অন্য সকল কার্যাবলি শরিয়তের বিধান অনুসারে পরিচালিত হয়। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মৌল স্তম্ভ। পবিত্র কুরআনের নির্দেশাবলি এবং রাসূল (সা.) এর হাদিসের বিধান অনুসারে অর্থনৈতিক কার্যাবলির মৌলিক নীতিমালা নির্ধারিত হয়।

প্রশ্ন ২৮। সম্পদের সুষম বণ্টনের প্রয়োজন হয় কেন? ব্যাখ্যা কর। [ঢা. বো. '১৯]

উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য পুঁজিপতির দ্বারা শ্রমিকের শোষণ। শ্রমিককে তার প্রাপ্য ও ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। অর্থাৎ জাতীয় আয়ের বৃহত্তর অংশ অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভোগ করে আর ক্ষুদ্রতর অংশ বণ্টিত হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে। এক্ষেত্রে সমাজের সকল জনসাধারণের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সম্পদের সুষম বণ্টনের প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন ২৯। উৎপাদিত সম্পদ কীভাবে বষ্টিত হয়? ব্যাখ্যা কর। [কু. বো.'১৬]

উত্তর: উৎপাদনের উপকরণ ৪টি। যথা- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন। মানুষ সর্বদা তার বিভিন্ন অভাব পূরণের জন্য এ ৪টি অপরিহার্য উপাদানের সাহায্যে প্রচেষ্টা চালায়। আবার মোট উৎপাদিত সম্পদ হতে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা হিসেবে আলাদাভাবে উত্ত ৪টি উপকরণের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। উৎপাদনের উপকরণসমূহের এ আয় ভূমির মালিক, শ্রমিক, পুঁজিপতি বা মূলধন মালিক এবং উদ্যোক্তার মধ্যে বণ্টিত হয়। এভাবে উৎপাদিত সম্পদ বা সম্পদের আয় উৎপাদন উপকরণসমূহের মধ্যে বণ্টিত হয়।

প্রশ্ন ৩০। বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার কারণ লেখ।

[মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর]

উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষ প্রশাসক, ব্যবস্থাপক, উদ্যোক্তাসহ মানবসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অনেক লোকসানের সম্মুখীন হয়। ফলে বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীয়করণ শুরু হয়। আর বর্তমানে বিশ্বে বিরাজমান অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সমতালে চলার লক্ষ্যে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অর্থনীতিকে পরিচালনা করা হচ্ছে।